আবার ভাঙা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বড় কাটরা, বহুতল ভবন তৈরির পাঁয়তারা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোগল স্থাপত্য বড় কাটরার একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোগল স্থাপত্য বড় কাটরার একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন তৈরির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি)।

ইউএসজির তথ্য অনুযায়ী, বড় কাটরার মূল স্থাপনার একটি অংশ (বড় কাটরা লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং) ভাঙা হয়েছে। দোতলা স্থাপনাটি ভাঙা শুরু হয় গত জুলাইয়ে। বিষয়টি জেনে গত ৩১ জুলাই চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ইউএসজি। এরপর কিছুদিন ভাঙার কাজ বন্ধ ছিল।

ভবনটি আবার ভাঙা হচ্ছে বলে গত রোববার খবর পায় ইউএসজি। বিষয়টি চকবাজার থানায় জানানো হয়। তখন থানার পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় স্থাপনাটি ভাঙার কাজ চলছেই।

এ অবস্থায় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউএসজি। পরে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএসজির প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম।

কে বা কারা স্থাপনাটি ভাঙছে জানতে চাইলে তাইমুর ইসলাম বলেন, ভাঙার সঙ্গে আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। তিনি নিজেকে স্থাপনার ওই অংশের মালিক বলে দাবি করছেন।

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএসজির প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চকবাজারের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার তীরে মোগল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন বড় কাটরা। ইমারতটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। ১৬৪৪ সালে শাহ সুজার বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ করা হয় এ কাটরা। এতে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সব বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ইমারতটির বিভিন্ন অংশ বর্তমানে বিলুপ্ত। দক্ষিণের আদি অংশটুকু অক্ষত রয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছে বড় কাটরা। ২০২০ সালে তালিকায় থাকা স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকার ৬৪ নম্বরে রয়েছে বড় কাটরা। সে অনুযায়ী, দুটি সংস্থাই ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা সংরক্ষণে দায়বদ্ধ।

স্থাপনাটি ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, বড় কাটরা ভাঙার বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রত্নসম্পদ আইন অনুযায়ী, কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে সরকার চিহ্নিত করলে সেটি ভাঙা যাবে না; সংরক্ষণ করতে হবে। কেউ সেটি সংরক্ষণে অক্ষম হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। অধিদপ্তর সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে। আবার সরকার চাইলে সংরক্ষণের জন্য ওই স্থাপনাসহ জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে।

জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙার খবর পেয়ে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিলেন। দিনভর সেখানে থেকে স্থাপনাটি যাতে না ভাঙা হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছেন।