ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক থেকে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেনসিয়াল পার্ক এলাকাপ্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি সইয়ের ছয় বছর পরও কাজ শুরু করতে পারেনি বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস এসডিএন বিএইডি (মালয়েশিয়া)। অথচ ওই আবাসন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বার্বাডোজ থেকে ৬০ কোটি ডলারের প্রশ্নবিদ্ধ ঋণ নিতে তারা রাজউকের অনুমতি চেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসকে দিয়ে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন সমীচীন হবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সুপারিশ করেছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পরিচালিত প্রাথমিক তদন্তেও প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

রাজধানীর অদূরে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বরে রাজউকের বেসরকারি অংশীদার হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। পিপিপির আওতায় রাজউক ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে।

কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসের দপ্তর পরিদর্শন করে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়। ওই তথ্যানুসন্ধানের পর অন্তর্বর্তীকালীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করেছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যে অসংগতি রয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানির নিট মুনাফা মাত্র ৬৯৬ ডলার। ফলে এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন সমীচীন হবে না।

জানতে চাইলে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মো. ওয়াহিদ সাদিক গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার ঝিলমিল প্রকল্পের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হবে। সেখানে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে মালয়েশিয়ার গ্লোবাল হোল্ডিংসের বিষয়টিও থাকবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঝিলমিল প্রকল্পের বেসরকারি অংশীদার মালয়েশিয়ার গ্লোবাল হোল্ডিংসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ওই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী বৃহস্পতিবার ঝিলমিল প্রকল্পের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হবে। সেখানে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে মালয়েশিয়ার গ্লোবাল হোল্ডিংসের বিষয়টিও থাকবে।
খন্দকার মো. ওয়াহিদ সাদিক, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের পরিচালক

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক প্রকল্পের বেসরকারি অংশীদার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস ও প্রকল্পের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান হংকংভিত্তিক বুলোভার্ড ক্যাপিটাল পার্টনার্স লিমিটেডের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজউকের কাছে বিদেশি ঋণের বিষয়ে একটি প্রস্তাবটি পাঠায়। এতে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করে, হংকংভিত্তিক বুলোভার্ড ক্যাপিটাল পার্টনার্স লিমিটেড ঝিলমিল প্রকল্পে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। তবে বুলোভার্ড ক্যাপিটালের ক্যামেন আইল্যান্ড শাখা থেকে ওই ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে। বাংলাদেশে যৌথ প্রকল্পের জন্য হংকংয়ের অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্থ দেওয়া হবে বার্বাডোজের আইন অনুযায়ী।

আরও পড়ুন

সূত্র বলছে, চুক্তির ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস প্রকল্পের কাজ শুরু করেনি। উল্টো বিদেশি ঋণ নিতে রাজউকের অনুমতি চেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৪ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এক সভা হয়। সভার আলোচনায় উঠে আসে, মাত্র ১০ লাখ রিঙ্গিতের (মালয়েশীয় মুদ্রা) অনুমোদিত মূলধনের একটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়াটা স্বাভাবিক নয়। হংকংয়ের প্রতিষ্ঠানটি কেন ওই ঋণ মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানটিকে দেবে?

সভায় বলা হয়, পিপিপির প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন জরুরি। কাজ শুরুর আগে বেসরকারি অংশীদার ও প্রস্তাবিত অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস ও হংকংয়ের বুলোভার্ড ক্যাপিটালের সত্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া দরকার।

সভায় আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, ওই দুই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

মালয়েশিয়ায় প্রাথমিক তদন্ত

বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস সম্পর্কে জানতে গত বছরের অক্টোবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অনুসরণ করে হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসের পাশাপাশি দেশটির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও চেম্বারের সঙ্গে নানা প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ শুরু করে। ওই সব যোগাযোগের ভিত্তিতে হাইকমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পাঠায়।

কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংসের দপ্তর পরিদর্শন করে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ১০ লাখ রিঙ্গিত। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, নির্মাণ ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নকাজে তারা যুক্ত।

তবে হাইকমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও ভোক্তা অধিকারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা কোম্পানিজ কমিশন অব মালয়েশিয়ায় বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস ২০০৯ সালে নিবন্ধিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাজের ধরন সম্পর্কে জানিয়েছে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সেবা, ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।