খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবি
পার্ক ও খেলার মাঠ থেকে সব নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনার অপসারণের দাবি জানিয়েছে ২৬টি সংগঠন। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানগুলোয় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে তারা। সব উন্মুক্ত স্থান চিহ্নিত করে সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করারও দাবি জানায় তারা।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে সংগঠনগুলো এসব দাবি জানায়। ‘পার্ক ও খেলার মাঠ থেকে সব নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনার অপসারণ চাই’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এসব দাবি জানান।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, বি-স্ক্যান ও ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ২৬টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘মাঠ-পার্কগুলোয় সব শ্রেণির মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। গণপরিসরগুলোয় বাণিজ্যিক স্থাপনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে জনগণের বিশেষত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বিদ্যমান মাঠ-পার্কগুলোর অবকাঠামোগত অবক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। ঘনবসতি ও উন্মুক্ত স্থানের অপর্যাপ্ততার কারণে ভূমিকম্প হলে আমরা ভয়াবহ দুর্যোগের শিকার হব। সুতরাং উন্মুক্ত স্থান তৈরি ও সংরক্ষণে আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে।’
প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিনিয়তই আমরা বায়ু ও শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি, যা আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। একই সঙ্গে খোলা স্থানের ঘাটতির জন্য আমাদের শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ হারাচ্ছে। পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দূষণরোধ ও শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগের সৃষ্টির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব।’
বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) রাইসুল হাসান বলেন, পার্ক ও মাঠের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ ও বাণিজ্যিকীকরণ মহানগরী, বিভাগীয় শহর, জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০–এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। মাঠ-পার্ক রক্ষায় সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।
ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ঢাকা শহর বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে প্রায় তলানিতে। মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত স্থান একটি শহরের বাসযোগ্যতার অন্যতম সূচক। সম্প্রতি অনুমোদিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় শহরের বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪টি বৃহৎ ইকোপার্ক ও ১৪টি অন্যান্য পার্ক ও খেলার মাঠের বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীর ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় শিশুদের মধ্যে কম্পিউটার-মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে। করোনাকালীন অনলাইনে ক্লাস করার কারণে এ সমস্যা আরও ভয়াবহতা ধারণ করেছে। শহরে নতুন নতুন মাঠ-পার্ক-গণপরিসর সৃষ্টির পাশাপাশি বিদ্যমান মাঠ-পার্কের যথাযথ সংস্কার ও সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা যাবে।
এ ছাড়া কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ছায়াতল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী মো. ইমন, ডিজঅ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রামের (ডিডিপি) সভাপতি জাকির হোসেন, গ্রিন ভয়েজের সমন্বয়ক আলমগীর কবির প্রমুখ।