ছোট্ট হাতে বর্ণ সেজেছে নানা রঙে-ঢঙে
বর্ণটা ‘হ’। মাথা বড় ‘হ’টা নানা রং দিয়ে লেখা। চারপাশে শুধু পেনসিলের আঁকিবুঁকি। তেমন একটা হচ্ছে ‘ম’। হাতে বানানো রঙিন মরিচ দিয়ে ‘ম’ লেখা। কাগজে পেনসিল-কলমে লেখা ‘ম’ নয়। চটের টুকরা দিয়ে লেখা ‘জ’ বর্ণ লিখে একই উপকরণ দিয়ে বর্ণটির নিচে আঁকা হয়েছে জনতার মুখ। কোনো কোনো বর্ণ বানানো হয়েছে ফেলে দেওয়া প্যাকেট, কটনবাড আর টুথপিক দিয়ে। শিশু বর্ণ কারিগরদের হাতে কল্পনার জগতের বর্ণ এমন নানা রং আর ঢঙে উঠে এসেছে।
আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বর্ণ কারিগর’দের এমন সব বর্ণের দেখা পেয়েছেন বিচারকেরা। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে প্রথম আলোর ‘বর্ণমেলা’ আয়োজনে শিশু-কিশোরেরা নানা নকশার বর্ণ তৈরি করেছে। এবার বর্ণমেলা আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘দুরন্ত শৈশব’।
‘বর্ণ কারিগর’ প্রতিযোগিতায় একটু বড় ‘শিশু কারিগরেরা’ বর্ণকে প্রকাশ করেছে গল্পের মাধ্যমে। একুশে ফেব্রুয়ারির ‘এ’ বর্ণ ঘিরে ভাষাশহীদ আর আন্দোলনের চিত্র, মাকে লেখা চিঠি। বড় আকৃতির খোলা বইটি বানানো হয়েছে শোলা দিয়ে। তাতে বসানো হয়েছে খুদে আকৃতির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা, নজরুলের শিশু-কিশোর সাহিত্য, পরি ও ঘাসফড়িং, ঠাকুরমার ঝুলি ইত্যাদি।
‘বর্ণ কারিগর’–এর পাশাপাশি বর্ণমেলা আয়োজনের মাধ্যমে ‘প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখা’ ও ‘ফিরে যাই দুরন্ত শৈশবে, মেতে উঠি গানের উৎসবে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বর্ণমেলা আয়োজনটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ‘মেরিল বেবি’। আয়োজনটির প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।
২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বর্ণমেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে।
বর্ণ কারিগর
দুরন্ত শৈশবের রঙে বর্ণ বানাও, বর্ণ পাঠাও আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক, খ ও গ—তিনটি বয়সভিত্তিক দলে মোট ৮৪টি বর্ণ জমা হয়।
‘ক’ বিভাগে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত, ‘খ’ বিভাগে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি এবং ‘গ’ বিভাগে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। ‘ক’ বিভাগে প্লে শ্রেণির জারা হাসান প্রথম, তৃতীয় শ্রেণির জায়ান ফারহান দ্বিতীয় এবং কেজি শ্রেণির আইলানি ইমাম তৃতীয় হয়েছে।
‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজমীন আন-নিসা হোসেন, দ্বিতীয় হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী সাহা (ওর্থী) এবং তৃতীয় হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুপসে ইমাম।
‘গ’ বিভাগে নবম শ্রেণির আধিয়া তারান্নুম, অষ্টম শ্রেণির নিবেদিতা সাহা (এ্যানী) এবং সপ্তম শ্রেণির হিমাদ্রি ইমাম যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে।
সেরা চিঠি
মন খুলে চিঠি লেখার যে আনন্দ, তা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত এই প্রজন্মের শিশুরা। প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রজন্মের কাছে খুদে বার্তা নিজেদের কথা বলার বড় মাধ্যম। তবে উদ্বুদ্ধ করলে যে শিশুরাও কাগজে মন খুলে লিখতে পারে, সেটিই প্রমাণিত হলো প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখার আয়োজনে।
প্রিয়জন হিসেবে কেউ দাদা-দাদি, নানা-নানি, খালা, বাবার কাছে লিখেছে, কেউ অদেখা ডাকপিয়নের কাছেই চিঠি লিখেছে। কেউ ‘আকাশের ঠিকানায়’ চিঠি লিখেছে প্রয়াত দাদা-দাদি, নানা-নানিকে।
একজন লিখেছে, ‘প্রিয় দাদিমা, আমি যখন আকাশের তারা দেখি, আমার মনে হয় এটা তুমি। যদি তুমি থাকতে, আমি তোমার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনতাম, তোমার হাতের রান্না খেতাম, তোমার সাথে হেঁটে বেড়াতাম।’
একজন লিখেছে, ‘প্রিয় ডাকপিয়ন আংকেল, ...আমি কখনো পোস্ট অফিস যাইনি, তবে লাল রঙের একটা বাক্স দেখিয়ে মাকে বললাম, এটা কী? তখন আমি জানতে পেরেছিলাম, এটা চিঠি ফেলার বাক্স।’
একজন বাবাকে লেখা চিঠির সঙ্গে ছবি এঁকে জুড়ে দিয়েছে বাবার সঙ্গে তার আনন্দে কাটানো সময়ের চিত্র। কখনো সে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে, কখনো বাবার হাত ধরে হাঁটছে, কখনো বাবার ঘাড়ে চড়ে রয়েছে।
প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখার এই প্রতিযোগিতায় ৪৬টি চিঠির মধ্যে সেরা ১০–এ যাদের চিঠি স্থান পেয়েছে, তারা হচ্ছে—বুসরা আহমেদ বর্ণ, শরীফ ইবতিহাজ ইসলাম, আরিনা বিশ্বাস, অর্পিতা ভট্টাচার্য, নাবিহা রুফাইদা চৌধুরী, মায়রা জাহান, জাকিয়া ইফ্ফাৎ রায়তা, আরাফি ইয়াশফিন, অরিজিত সাহা এবং ত্বাকী মোহাম্মদ। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় অনূর্ধ্ব ১০ বছর বয়সীরা।
বর্ণ কারিগর ও প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন শিল্পী আবদুল মান্নান, শিল্পী ফারেহা জেবা ও শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল। সমন্বয়ক ছিলেন প্রথম আলোর প্রধান শিল্প উপদেষ্টা অশোক কর্মকার। সমন্বয়ে সহযোগী হিসেবে ছিলেন মাসুক হেলাল, সৈয়দ লতিফ হোসাইন, এস এম রাকিবুর রহমান, আরাফাত করিম ও মাহফুজুর রহমান।
দুরন্ত শৈশবের গান
‘ফিরে যাই দুরন্ত শৈশবে, মেতে উঠি গানের উৎসবে’ আয়োজনে ১১ জন সেরা নির্বাচিত হয়েছে। তারা হচ্ছে—সরকার একান্ত ঐতিহ্য, রেহনুমা সাদিয়া আহির, বিদ্যাস্তুতি সিংহ, অরিজিৎ সাহা, প্রাঙ্গণ সরকার, দ্যুলোক দ্যুতিমান, অর্পিতা চক্রবর্তী, অরিত্র বসাক, জাওয়াদ আরিক, শ্বেতশ্রী সরকার ঋত্বিকা ও আদিত্য দাস।
গানের প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন গীতিকার ও প্রথম আলোর কালচার ইভেন্টস অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্সের (সাংস্কৃতিক আয়োজন ও বিশেষ বিষয়গুলোর) সমন্বয়ক কবির বকুল এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।