ঢাকায় কতটা সবুজ দরকার, কতটা আছে জানাল বুয়েট

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। বুয়েট কাউন্সিল ভবন, ২০ মার্চ
ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা মহানগরে যতটা সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, আছে তার অর্ধেকের কম। আবার যেটুকু সবুজ আছে, সেটুকু এলাকাও সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ও নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নগরবাসী এর সুবিধা পায় না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শিরোনামে গবেষণাটি গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মেয়াদে করা হয়। আজ সোমবার সকালে বুয়েটের কাউন্সিল ভবনে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

গবেষণা বলছে, ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম। সবুজ বা উন্মুক্ত জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমও একটি বাধা।

আরও পড়ুন

গবেষণায় দেখা যায়, রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও বিএফডি ঢাকার সবুজ জায়গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে সবুজ জায়গা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাজউকের বিরোধ রয়েছে। আবার সিটি করপোরেশন অনেক ক্ষেত্রে মুনাফা করার জন্য সবুজ জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।

গবেষণার নেতৃত্ব প্রদানকারী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, রাজউক শহরের মধ্যে সবুজ জায়গা তৈরি করতে পারে। তৈরির পর তা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের জায়গায় কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যা আছে।

রাজউকের অভিযোগ, সরকারি সংস্থা সবুজ জায়গাকে পরিবর্তন করার সময় তার কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। তবে চুক্তিতে ব্যত্যয় ঘটালে রাজউক সবুজ জায়গা ফেরত নিতে পারে।

গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান বলেন, সবুজ জায়গা ঘিরে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হলে যারা বাইরে থাকছে, তারা ভাবছে, সেখানে তাদের অধিকার নেই। সবুজ জায়গা সবার জন্য করার ক্ষেত্রে এটা বাধা। আবার পার্কগুলো এমন করে করা হচ্ছে বা এমন স্থাপনা করা হচ্ছে, যেখানে নিম্নবিত্ত শ্রেণি মনে করে, এটা তাদের জন্য নয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ড্যাবে সবুজ এলাকার বিষয়টি আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। কারণ, বাংলাদেশে অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বাস করে।

বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, যে গবেষণা করা হয়, তা যেন দেশের কাজে লাগে, তার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম করা দরকার।

বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান বলেন, পৃথিবীর কোথাও পার্ক বা সবুজ এলাকায় দেয়াল দেওয়া হয় না, বাংলাদেশে হয়। সবুজ যেন বাইরের মানুষও দেখতে পারে, সে জন্য বুয়েটের সবুজ এলাকার বিদ্যমান দেয়াল ভেঙে ফেলে স্বচ্ছ দেয়াল করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল কর্মসূচির অর্থায়নে এই গবেষণা হয়েছে।