রিকশাচিত্র স্বীকৃতি পেয়েছে, এখন প্রয়োজন সংরক্ষণ: মুহম্মদ নূরুল হুদা

রিকশাচিত্রশিল্পীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সনদ নিচ্ছেন এক শিল্পী। আজ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়। ২৬ ডিসেম্বরছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়া রিকশা ও রিকশাচিত্রকে ধরে রাখতে রাজধানীর বড় সড়কে রিকশা চলতে দিতে হবে। প্রয়োজনে পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কর্মশালার মাধ্যমে রিকশাচিত্র অঙ্কনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। রিকশাচিত্রশিল্পীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব প্রস্তাব।

আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রিকশাচিত্রশিল্পীরা। শতাধিক রিকশাচিত্রশিল্পীকে সনদ, শুভেচ্ছা স্মারক এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।

স্বাগত বক্তব্যে কবি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এই শিল্পীরা কেউ আর্ট কলেজে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা নেননি। কিন্তু তাঁরা না থাকলে আমরা রিকশা আর্ট পেতাম না। প্রয়োজনের কারণে এখন রিকশার অনেক কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। তবে রিকশাচিত্রশিল্পের অর্জন ধরে রাখতে হলে বড় রাস্তায় রিকশা চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। স্বীকৃতির পর এখন সংরক্ষণ প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আট বছর ধরে কাজ করে আবার নতুনভাবে তৈরি করে রিকশাচিত্রের ফাইল জমা দেওয়া হয়। এ কাজে বাংলা একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। করোনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭০ রিকশাচিত্রশিল্পীকে প্রণোদনা দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনামেল’ পেইন্ট ব্যবহার করে এভাবে আর কোথাও শিল্পকর্ম করার চর্চা নেই বলেই বাংলাদেশের রিকশাচিত্র বিশেষ।

ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ওয়ালিদ বিন কাশেম বলেন, ‘যে বাহনে আমরা ভালোবেসে চড়েছি, তা আজ বিশ্বসংস্কৃতির অংশ।’ রিকশা ও রিকশাচিত্রের নথি তৈরি এবং তা ইউনেসকোর কাছে পাঠানোর জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন। ‘রিকশা স্কয়ার’ তৈরি করে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি অর্জনের দিবসটি পালন করার প্রস্তাব দেন ওয়ালিদ বিন কাশেম। আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আন্তসরকার কমিটির ১৮তম অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

রিকশাচিত্র নিয়ে কর্মশালার প্রস্তাব উঠে আসে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ১৮ জানুয়ারি কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন সাজানো হবে রিকশাচিত্রশিল্পীদের দিয়ে। অতিসত্বর কর্মশালার মাধ্যমে এ শিল্পকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন সচিব।

বাংলা একাডেমির আয়োজনে রিকশাচিত্রশিল্পীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিল্পী ও অতিথিরা। ছবি: ২৬ ডিসেম্বর
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

বাংলা একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আমিনুর রহমান রিকশাচিত্র নিয়ে নথি তৈরির জন্য এই শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘রিকশাচিত্রশিল্পের ইউনেসকো-স্বীকৃতির নেপথ্যে যে শিল্পীদের অবদান মূল ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে, তাঁদের সংবর্ধিত করাও আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে এ অর্জনে এক দিগন্ত প্রসারিত হয়ে যাওয়ার কথা। সবশেষে ধন্যবাদ জানান একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হাসান কবীর।