খাঁচায় বন্দী সোহেল, ওপরে লেখা ‘মুক্তি চাই’

খাঁচার ভেতর নিজেকে বন্দী করেছেন হোসেন সোহেল। তাঁর চাওয়া, কোনো প্রাণীকে যেন বন্দী করে না রাখা হয়
ছবি: প্রথম আলো

খাঁচায় বন্দী প্রাণীগুলোর যন্ত্রণা পীড়া দেয় তাঁকে। চান মুক্ত থাকুক খাঁচাবন্দী সব প্রাণী। সেই চাওয়া থেকে শরীরে শিকল পরে খাঁচাবন্দী হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেছেন হোসেন সোহেল নামের এক ব্যক্তি। খাঁচার ওপরে লাল রঙে লেখা, ‘মুক্তি চাই’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আজ শনিবার সকাল থেকে খাঁচার ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন সোহেল। তাঁর ভাষ্যমতে, আগামী তিন দিন এখানে খাঁচার ভেতরেই অবস্থান করবেন। ১৮ বছর সাংবাদিকতায় বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সোহেল এখন পার্বত্য এলাকা বিষয়ে কনসালট্যান্সি করছেন।

জানতে চাইলে সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পশুপাখিকে খাঁচায় বন্দী করা নিষ্ঠুরতা। টাকার বিনিময়ে তাদের প্রদর্শন করা অনৈতিক। কারণ, পৃথিবীটা তাদেরও। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি সিস্টেম আমি একা পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু আমি চাই এই পরিবর্তনটা আসুক।’

ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচির সঙ্গে সরকার, রাজনীতি, কোনো সংগঠন-সংস্থা বা ব্যক্তি জড়িত নন বলে জানিয়েছেন সোহেল। তিনি বলেন, ‘এই লড়াইটা আমার নিজের সঙ্গে নিজের। আমিও যন্ত্রণা নিতে চাই, ঠিক যেভাবে খাঁচায় বন্দী প্রাণীগুলো যন্ত্রণা পায়। তিন দিন ও রাত এখানে অবস্থান করব।’

নিজেকে ‘প্রকৃতিপ্রেমী পরিবেশবাদী’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন হোসেন সোহেল। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানার বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা পশুপাখি নির্যাতন ছাড়া আর কিছু নয়। টাকার বিনিময়ে পশুপাখিকে প্রদর্শন করা হচ্ছে, কিন্তু তাকে তার অধিকারটুকু দেওয়া হচ্ছে না। খাঁচায় ঢুকিয়ে পশুপাখির অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।’

পশুপাখিকে খাঁচায় বন্দী না রাখার দাবি জানালেন সোহেল। বললেন, ‘একটা পশুকে তার মায়ের বুক থেকে টেনে এনে খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে মায়ের কাছ থেকে বাচ্চার বিচ্ছেদ ঘটে যাচ্ছে। প্রাণীর প্রয়োজন মানুষ বুঝতে পারে না, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সব আয়োজনই তাদের জন্য রয়েছে। তাই তথাকথিত চিড়িয়াখানা অবশ্যই বাতিল করতে হবে।’

বর্তমানে যে চিড়িয়াখানাগুলো হচ্ছে, সেখানে ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সোহেলের। বন বিভাগের সঙ্গে ইকোপার্ক বা চিড়িয়াখানার মালিকদের কোনো লেনদেন আছে কি না, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই জবাবদিহি বন বিভাগকে করতে হবে।