সিডব্লিউসিএসের পরামর্শ সভা: প্রবাসী নারী কর্মীদের আইনি সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই

প্রতীকী ছবি

প্রবাসী নারী কর্মীদের পরিস্থিতি এত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যে যথাযথ আইনি সুরক্ষারও নিশ্চয়তা নেই। তাঁরা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেন। আবার দেশে ফিরে আসা কর্মীরাও থাকেন ঝুঁকিতে। অধিকাংশ মানুষ তাঁদের নেতিবাচকভাবে দেখেন। তাঁদের ধারণা, নারী কর্মীরা শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়ে ফিরেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামী বা পরিবার তাঁদের গ্রহণ করতে চায় না।

দেশে ফিরে আসা নারী কর্মীদের নিয়ে নীতি-পর্যালোচনায় এসব কথা জানিয়েছে সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ (সিডব্লিউসিএস)। আজ বৃহস্পতিবার প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সিডব্লিউসিএস আয়োজিত পরামর্শ সভায় এটি নিবন্ধ আকারে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, অভিবাসনপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে নারী কর্মীরা শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন।

সভায় উপস্থাপন করা নিবন্ধে বলা হয়, বাল্যবিবাহ, যৌতুকের চাপ, স্বামীর একাধিক বিবাহ, ডিভোর্স—এমন নানা ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতনের কারণে নারীরা বিদেশে যেতে বাধ্য হন। অভিবাসন তাঁদের যেমন অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা বাড়াতে পারে, একইভাবে ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। নিজের ও পরিবারের দারিদ্র্য দূর করে ভাগ্য ফেরাতে নারী কর্মীরা কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে যান। তবে বেতন না পাওয়া, কম বেতন পাওয়া, জমাতে না পারা—এমন নানা কারণে পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে কষ্ট হয়।

সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের ভয়াবহ অবস্থা দেখে এসেছেন বলে জানান জাতীয় মানবাধিকার পরিষদের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা। তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখে চোখে পানি ধরে রাখা দায়। তাঁদের যারা পাঠাল, তাদের জবাবদিহি কোথায়। রাষ্ট্র কি এর দায় এড়াতে পারে? নাকি বছরে ১৩ লাখের বেশি কর্মী পাঠিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।’ তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ২০ বছর ধরে অভিবাসন খাতে একই সমস্যার কথা শুনছেন, কিন্তু সমাধানে অগ্রগতি নেই।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আলম বলেন, সেবা নিতে এসে একজন কর্মীকে যেন ঘুরতে না হয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার সুরক্ষায় দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে। তবে যাঁরা বাস্তবায়নের সঙ্গে আছেন, যাঁরা সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত; তাঁদের ইতিবাচক সদিচ্ছার বড় অভাব।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, দেশে ফেরা প্রবাসী নারীদের ঋণ দিতে শর্ত অনেক সহজ করা হয়েছে। স্বামী বা পরিবার গ্রহণ না করলে তাঁদের নির্ধারিত ঠিকানা থাকে না। তবু তাঁরা ঋণ নিতে পারবেন। তাঁদের ঋণে কোনো সেবা মাশুল নেই। এমনকি এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোনো ইকুইটি দরকার হয় না। তবে নারী কর্মীর আবেদন তেমন পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক শোয়াইব আহমেদ খান, বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক মাসুদ রানা প্রমুখ। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তৃণমূলে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থার অনেকেই দেশে ফিরে আসা নারী কর্মীদের ভোগান্তি নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলেন। একই সঙ্গে তা সমাধানে পরামর্শও দেন।

নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডব্লিউসিএস সভাপতি ইশরাত শারমিন। ফিরে আসা প্রবাসী নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকার দুই উপজেলায় চার বছর ধরে কাজ করেছে সিডব্লিউসিএস। ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জে এটি পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের বিভিন্ন কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।