কিশোরীদের বিয়ে করা পুরুষেরা ‘ভাইরাস’: মেহের আফরোজ

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাক আয়োজিত বাল্যবিবাহ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের অতিথিরা
ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ বলেছেন, কিশোরীদের বিয়ে করছেন, এমন পুরুষেরা ‘ভাইরাস’। ওই পুরুষদের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরা দরকার। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে তাঁদের সামাজিকভাবে লজ্জায় ফেলতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার ব্র্যাক আয়োজিত বাল্যবিবাহ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মেহের আফরোজ। রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি (সেলপ্‌)। অনুষ্ঠানে ‘বর্ন টু বি আ ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ (কনে হওয়ার জন্যই জন্ম, বাল্যবিবাহ: প্রবণতা ও কারণ) শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় দেখানো হয়, শুধু দরিদ্র নয়, ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারেরও বাল্যবিবাহের উচ্চ হার রয়েছে। প্রতি ১০০ মেয়ের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের ৬০ জন, মধ্যবিত্ত পরিবারের ৫৫ জন এবং ধনী পরিবারের ৫০ জনের বাল্যবিবাহ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী মাধ্যমিকে পড়া মেয়েরা। সামাজিক প্রথার কারণে দেশের ৭০ শতাংশের বেশি কিশোরী বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহের আফরোজ বলেন, শুধু কিশোরী বা তাদের অভিভাবকদের নয়, যে ছেলেরা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে করতে চায়, তাদের সচেতন করাটা জরুরি। ছেলেরা কেন অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে করছে, সেটা নিয়েও গবেষণা প্রয়োজন।

মেহের আফরোজ আরও বলেন, মা–বাবা মেয়ের পরিচয়ে যত দিন গর্ব বোধ না করবেন, মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটাবেন, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ্‌) প্রধান ও ইনচার্জ শাশ্বতী বিপ্লব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রধান অন্তরায় বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের নানা পদক্ষেপ রয়েছে। গবেষণায় সরকারের পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরা প্রয়োজন। বাল্যবিবাহ রোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্যে ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ বলেন, বাল্যবিবাহ নিয়ে সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণা রয়েছে যে দরিদ্র হলে বা স্কুল থেকে ঝরে পড়লে বাল্যবিবাহ হয়। তবে এই গবেষণায় অন্য কারণগুলোও খুঁজে দেখা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস ও জীবনদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনা সম্ভব।

ব্র্যাকের গবেষণায় বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের প্রবণতা ও কারণ জানতে ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার প্রায় ৪৫। এর মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সী। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হচ্ছে পিরোজপুর, সেখানে এ হার প্রায় ৭৩। সবচেয়ে কম বাল্যবিবাহ হচ্ছে নেত্রকোনায়, সেখানে এ হার ২৪–এর বেশি। স্কুলে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়েছে ৫৬ শতাংশ মেয়ের। বাল্যবিবাহের কারণগুলোর মধ্যে দেখা গেছে, ‘উপযুক্ত পাত্র’ পাওয়ার কারণে ৪৪ শতাংশ মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ শতাংশ মেয়ে দারিদ্র্যের কারণে, ১০ শতাংশ বরপক্ষের যৌতুক কম চাওয়া বা না চাওয়া, ৭ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, ৬ শতাংশ পড়াশোনায় ভালো না হওয়া এবং বাকি ১৫ শতাংশ মেয়ের অন্যান্য কারণে বাল্যবিবাহ হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে ৫০ শতাংশই মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্র্যাকের সেলপ্‌ একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের নিয়ে গ্রামভিত্তিক ‘স্বপ্নসারথি’ দল গঠন করা হয়েছে। ২৭ জেলার ১ হাজার ৯৭০টি গ্রামে গড়ে তোলা ‘স্বপ্নসারথি’ দলে রয়েছে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৫১ হাজার ৫৮২ কিশোরী।