ঈদ আনন্দে পঞ্চম দিনেও মুখর লালবাগ কেল্লা
ঈদের পঞ্চম দিন, শুক্রবার। ঢাকার রাস্তাঘাটে নেই যানজট, এখনো কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেনি রাজধানী। কিন্তু বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লায় ছিল ভিন্ন চিত্র। ফটকের সামনে টিকিট কেনার জন্য দীর্ঘ সারি। কয়েক শ বছরের পুরোনো মুঘল আমলের এই স্থাপনায় ঘুরতে এসেছেন নানা বয়সী মানুষ। পরিবার নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি, যাঁরা ঈদের বন্ধে সময় কাটাতে শিশুদের নিয়ে এখানে এসেছেন।
ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, কেল্লার ছায়ায় কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ দূরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, মাঠজুড়ে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া এক শিশু বলল, ‘বাসায় থাকলে শুধু টিভি দেখা হয়। আজ খেলতে পারছি ছোট ভাইদের সঙ্গে।’
সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন একজন বাবা। তিনি ছোটবেলায় ঈদের সময় এখানে আসতেন। শৈশবের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তখন এত ভিড় ছিল না। প্রেম করতাম এই ছায়ায়। জায়গাটা আমার জীবনে রঙিন।’
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবেদার মোহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ সালে ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে লালবাগ কেল্লার নির্মাণ শুরু করেছিলেন। তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। তাঁর উত্তরসূরি মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ আবার শুরু করেন। কিন্তু তিনিও কাজ শেষ করেননি। ওই অসমাপ্ত অবস্থায় দুর্গটি ব্যবহার করা হতো।
বলা হয়ে থাকে, শায়েস্তা খাঁর মেয়ে পরীবিবি মারা যাওয়ার কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কেল্লার মধ্যেই রয়েছে পরীবিবির মাজার। লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এটি। শায়েস্তা খাঁ তাঁর মেয়ের স্মরণে চারকোনার মনোমুগ্ধকর যে মাজারটি তৈরি করেছিলেন, সেটি দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর এবং বিভিন্ন রঙের ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালি দিয়ে মাজারের ভেতরের নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে।
নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন এক বৃদ্ধা। বসেছিলেন পরীবিবির মাজারের পাশে। তিনি বলেন, ‘নাতি-নাতনিদের মুখে শুনেছি জায়গাটা সুন্দর, তাই এসেছি। তারা খেলতে পারে—এই আনন্দটাই বড়।’
কেল্লার দক্ষিণ তোরণের পাশে ‘রক-পেপার-সিজার’ খেলছিল দুই ভাই। কেল্লার প্রাঙ্গণে দৌড়াদৌড়ি করছে আরও অনেক শিশু। চারদিকে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। তাঁরা গল্প করছেন, ছবি বা সেলফি তুলছেন।
ঘুরতে ঘুরতে এক বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। লি নামের এই তরুণ এসেছেন চীন থেকে। আগ্রহ নিয়ে তিনি কেল্লার নানা স্থাপনার ছবি তুলছিলেন। দেশে দেশে ঘুরে বিখ্যাত জায়গা ও স্থাপনার ছবি তুলতে তাঁর ভালো লাগে। লালবাগ কেল্লার ইতিহাস তিনি জানেন না। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে জেনে এখানে এসেছেন। এখানে আসার পর কেল্লার ইতিহাস জানার চেষ্টা করছেন।
কেল্লার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশিদের জন্য অনেক আগে একটি পরিচিতিমূলক বই বের করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এটা আর প্রকাশিত হচ্ছে না। এটি প্রকাশ করা গেলে বিদেশি পর্যটকদের কাছে লালবাগ কেল্লার পরিচিতি আরও সহজে তুলে ধরা যেত বলে মনে করেন তাঁরা।
কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, এবার ঈদের প্রথম থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৫ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রি হয়েছে ঈদের তৃতীয় দিনে। যার অর্থমূল্য ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮১০ টাকা। পঞ্চম দিনে তুলনামূলক কম টিকিট বিক্রি হয়েছে, যার অর্থমূল্য ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৮০ টাকা।