বৈচিত্র্যময় শিল্পের প্রদর্শনী

উদ্বোধনের পর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব ঘুরে দেখছেন অতিথিরা। গতকাল শিল্পকলা একাডেমিতে।ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

তারা অদম্য। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতা অতিক্রম করে নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করে তুলেছেন। কেউ ছবি এঁকেছেন। কেউ গড়েছেন ভাস্কর্য। কেউবা গলায় তুলেছেন সুর, এমন বৈচিত্র্যময় শিল্পের প্রদর্শনীর উদ্বোধনের ভেতর দিয়েই দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হলো দুই দিনের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব।

‘সকলের সঙ্গে সকলে মিলে মানবিক বিশ্ব গড়ব’ স্লোগান নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই উৎসব যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করেছে নাট্যসংগঠন ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল। এতে সহায়তা করছে প্রতিবন্ধীদের নাট্যসংগঠন সুন্দরম ও আইআইডি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

উৎসবের উদ্বোধন করেন সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

উৎসবে সুন্দরমের আটটি বিভাগীয় দল ও কলকাতার জনসংস্কৃতি ‘সেন্টার ফর দ্য থিয়েটার অব দ্য ওপ্রেসড’ মোট ১০টি নাটক মঞ্চস্থ করবে। এ ছাড়া থাকছে সেমিনার, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ও প্রতিবন্ধী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও ‘অদম্য’ নামের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের চারুকলা ও হস্তশিল্প সামগ্রীর প্রদর্শনী। এই উৎসবে প্রায় ২৪০ প্রতিবন্ধী শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের লবিতে ‘অদম্য’ নামের প্রদর্শনী উদ্বোধনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা করেন দেশের ফিজিওথেরাপির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর।

আরও পড়ুন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিও ছিল ব্যতিক্রমী। ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এবং অন্য অতিথিরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে চোখ বন্ধ করে ইজেলে রাখা ক্যানভাসে স্বাক্ষর করে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারেও অংশ নেন।

ভ্যালেরি বলেন, এই আয়োজন অংশ নিতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। প্রতিবন্ধীরা সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষ। তাদের সমস্যাগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। সব মিলিয়ে এই আয়োজনের জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান।

উৎসবে এক প্রতিবন্ধী শিল্পীর তৈরি করা ভাস্কর্য দেখেছেন অতিথিরা।
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উৎসবের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মসূচি পরিচালক ডেভিড নকস, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইআইডির সিইও সাঈদ আহমেদ বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রতিবন্ধী নাট্যনির্দেশক জেনি সেলি ও সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ।

অদম্য প্রদর্শনীতে রয়েছে শিল্পী নার্গিস পলির মিশ্রমাধ্যমে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর চিত্রকর্ম। এই প্রথমবারের মতো এ চিত্রকর্মে ব্রেইল–পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা এতে হাত বুলিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পড়তে ও শিল্পকর্মটি উপলব্ধি করতে পারবেন।

এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া শিল্পী কাবেরী সুলতানার পাঁচটি শিল্পকর্ম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতক তাওহিদ আল আশিক, স্বশিক্ষিত শিল্পী মাধব বণিকের দুটি করে চিত্রকলা, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের ভাস্কর শংকর ধরের ধাতব, সিমেন্ট, কাঠ, পোড়ামাটিসহ বিভিন্ন মাধ্যমের বেশ কিছু ভাস্কর্যসহ প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নানা মাধ্যমের বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বংশীবাদন করেন গাজীপুর মৌচাকের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী মোহন সরকার।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর নাট্যশালা ভবনের ষষ্ঠ তলায় অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবন্ধীদের শিল্পচর্চা বিষয়ে সেমিনার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে বেলা তিনটায় প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল, লন্ডনের প্রতিবন্ধী নাট্যনির্দেশক জেনি সেলি, ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক শ্যানন ওয়েস্ট ও আইআইডির প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে পাঁচটি নাটকের মঞ্চায়ন হয়।