মেয়র চলে যেতেই থমকে গেল মশকনিধন কার্যক্রম

মেয়র থাকার সময় বেশ জোরেশোরে চলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। কিন্তু মেয়র চলে যেতেই ওয়ার্ডের কোনো সড়কেই দেখা যায়নি পরিচ্ছন্নকর্মীদের
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। আজ শনিবার এই ওয়ার্ডে ছিল বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান। মেয়রের উপস্থিতিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে শুক্র হয় কার্যক্রম। কিন্তু মেয়র চলে যেতেই থমকে যায় অভিযানের কার্যক্রম।

দেখা যায়, মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস চলে যাওয়ার পর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কেউ গাছের নিচে বসে আছেন। কেউ অলিগলিতে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। আর মশকনিধনকর্মীরা কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। মেয়রের উপস্থিতিতে সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা এই রেড জোন এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে।

এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী পাওয়া গেলে ওই ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি সংস্থাটি ১৪ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। গজমহল রোড, মনেশ্বর, তল্লাবাগ, টালী অফিস রোড, দক্ষিণ মধুবাজার, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ও জিগাতলা নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। আর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম, রসুলপুর, আলীনগর ও আশ্রাফাবাদ এলাকা।

ওয়ার্ড দুটিকে রেড জোন ঘোষণার পর ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মূলের পাশাপাশি এলাকা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

সরেজমিনে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা পৌনে ১১টার দিকে জিগাতলা এলাকায় আসেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে দেখেন। বাসাবাড়িতে গিয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। প্রায় ঘণ্টাখানেক থাকার পর মেয়র এই ওয়ার্ড থেকে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে চলে যান। সেখানেও একই ধরনের অভিযান চলার ঘোষণা ছিল।

বাসাবাড়িতে গিয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান মেয়র তাসপ
ছবি: প্রথম আলো

১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশা নিমূল কার্যক্রমে অংশ নিয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক মাস ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫০ থেকে ৫৪ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা উৎস নিধনের মাধ্যমে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কার্যক্রম গতিশীল রেখেছি, বেগবান রেখেছি। তার ফলশ্রুতিতে এক মাস ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

এদিকে মেয়র চলে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর মশকনিধনকর্মীদের ওই এলাকার অলিগলিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে মশকনিধনকর্মীরা কোথায় আছেন, তা জানতে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ওয়ার্ডের মশক নিধন কার্রযক্রমের সুপারভাইজার ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে এই ওয়ার্ডের একজন মশকনিধনকর্মীর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি জানান, তাঁরা সবাই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আছেন। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সুপারভাইজার ইকবাল অন্য ওয়ার্ডের কয়েকজন মশক নিধন সুপারভাইজারকে সঙ্গে নিয়ে গল্প করছেন। আর মশকনিধনকর্মীরাও নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে ব্যস্ত।

দুপুর সাড়ে ১২টায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে মশক নিধন কর্মীরা গল্পে মত্ত
ছবি: মোহাম্মদ মোস্তফা

আয়োজন এত বেশি কিন্তু মেয়র চলে যাওয়ার পর মশকনিধন কর্মীদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নে ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মশকনিধনকর্মীরা কাজ করেছেন। ইকবাল হোসেন যখন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন, তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি প্রতিবেদককে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ না করারও অনুরোধ জানান। তবে তাঁর পাশে বসে থাকা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মশক নিধন কার্যক্রমের সুপারভাইজার হাসান উৎসব নামের এক ব্যক্তি বলেন, আজ সকাল সাড়ে আটটায় কাজ শুরু হয়েছে, তাই একটু আগে কাজ শেষ হয়ে গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, মশকনিধনকর্মীদের বেলা একটার আগে মাঠ ছেড়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কেন আগে কাজ শেষ করেছে, সে বিষয়টি তিনি খবর নিয়ে দেখবেন।

বেলা পৌনে একটায় তুলা গাছতলা সড়কে দেখা যায়, তখনো ময়লাভর্তি বস্তা পড়ে আছে।
ছবি: প্রথম আলো

মেয়রের আগমন উপলক্ষে এই ওয়ার্ডের ১১ জন মশকনিধনকর্মীর পাশাপাশি আশপাশের আরও আটটি ওয়ার্ড থেকে আটজন মশকনিধনকর্মী এবং এসব ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদেরও আনা হয়েছিল। তাঁরাও মেয়রের জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।

জিগাতলার যে এলাকায় মেয়র সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, ওই এলাকার এক দোকানির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি (মশা) আগের চেয়ে একটু ভালো। সকালে ও বিকেলে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন কি না—এমন প্রশ্নে বয়োবৃদ্ধ ওই দোকানি বলেন, বিকেলে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়। সকালে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, এমনটা তিনি দেখেননি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়ের ফটকের বাইরে বসে গল্প করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিতে এই ওয়ার্ডে আজ ৮৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত করা হয়েছিল বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র বলছে, এই ওয়ার্ডের অলিগলিতে মাইকিং করে বাসিন্দাদের বর্জ্য রাস্তায় রাখতে বলা হয়েছিল। তবে বেলা পৌনে একটায় তুলা গাছতলা সড়কে দেখা যায়, তখনো ময়লাভর্তি বস্তা পড়ে আছে।

মেয়র চলে যাওয়ার পর কাজ না করে বিশ্রাম করার বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কাজে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রচণ্ড গরমের কারণে কেউ কেউ বিশ্রাম নিতে পারেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, মেয়রকে দেখানো পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।