বকেয়ার ৬২ লাখ টাকা পেলেন ঢাকা উত্তরের ২৫ পরিচ্ছন্নতাকর্মী

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) লোগো

‘ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত, প্রথমে সিটি করপোরেশনের রাস্তা ঝাড়ু, পরে চলন্তিকা বাজারের হকারদের দোকানের ময়লা পরিষ্কার করতাম। দিনে আয় হতো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কিন্তু ওই টাকায় সংসার খরচ চলত না। তাই গত এক বছরে স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থেকেও আমাকে অনেক টাকা ধার নিতে হয়েছে।’

কথাগুলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী জোসনা বেগমের। কাজ করেও টানা ১৩ মাস সিটি করপোরেশন থেকে তিনি এক টাকাও বেতন না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। সম্প্রতি বকেয়া বেতনের ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন তিনি। এতে কিছুটা হলেও জোসনার সংসারে স্বস্তি ফিরেছে।

জোসনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন কী কষ্টে ছিলাম কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। দিনের পর দিন শুধু কাজই করে যেতে হয়েছে। কিন্তু কোনো টাকা পাইনি।’ শেষ পর্যন্ত পরিশ্রমের টাকা পেয়ে খুশি জোসনা বলেন, ‘মেয়রকে অনেক ধন্যবাদ। বেতন পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এখন প্রতি মাসের বেতন পাচ্ছি।’

জোসনা বেগমের মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আরও ২৪ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়মিত কাজ করেও টানা ১৩ মাস কোনো বেতন পাননি। তাঁরা সবাই ঢাকা উত্তর সিটির দৈনিক চুক্তিভিত্তিক (মাস্টাররোল) কর্মী।

তাঁদের মানবেতর জীবন নিয়ে গত বছরের জুনে ‘তিন মাস বেতন পান না ২৫ পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। তখন মেয়র আতিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছিলেন, সমস্যাটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বিস্তারিত জেনে দ্রুত তা সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

গত সপ্তাহে ওই ২৫ কর্মী তাঁদের বকেয়া বেতনের ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ টাকা পেয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মাস্টাররোলের কর্মীদের কাজ করাতে মন্ত্রণালয় থেকে যে অনুমতি নিতে হয়, সেটি না নেওয়ার কারণেই তাঁদের (২৫ পরিচ্ছনতাকর্মী) বেতন নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়েছিল।

বকেয়া বেতন পাওয়া কর্মীদের একজন ট্রাক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নূর মুহাম্মদ। তিনি রাজধানীর গাবতলী সিটি কলোনিতে (পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাস) থাকেন। বকেয়া বেতন বাবদ নূর হোসেন ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা পেয়েছেন।

নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বেতন বকেয়া থাকার সময়টাতে তিনি তাঁর বাড়ির পাশের পরিচিত তিনটি মুদিদোকান থেকে বাকিতে বাজার করে সংসার চালিয়েছেন। দোকানগুলোয় যথাক্রমে ৪৪ হাজার, ১৭ হাজার ও ৭ হাজার টাকা করে বাকি ছিল তাঁর। বকেয়া বেতন পেয়ে বাকির টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সংসার খরচের বাইরে সন্তানদের স্কুলের বেতন ও অন্য কাজে নগদ টাকার প্রয়োজনে সুদে ঋণ নিতে হয়েছে তাঁকে। বেতন না পাওয়ার এই সময়ে মোট ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বেতন পেয়ে সুদসহ সেই ঋণের ১ লাখ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন বলেও জানান নূর মোহাম্মদ।

বেতন পাওয়া ২৫ কর্মীর মধ্যে ১২ জন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫, ১২ জন অঞ্চল-২ ও ৪ এবং একজন ৩ নম্বর অঞ্চলে কাজ করেন। এর মধ্যে ১৭ জন পুরুষ পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বাকিরা নারী।

ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ওই কর্মীদের নিয়োগের সময় মন্ত্রণালয় প্রথম তিন মাসের অনুমোদন দেয়। পরে সেটা আর নবায়ন করা হয়নি। সিটি করপোরেশন থেকেই অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের কাজ করানো ও বেতন দেওয়া হচ্ছিল। তবে এ প্রক্রিয়া বিধিসম্মত না হওয়ায় একপর্যায়ে তাঁদের বেতন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীরা এখন সবাই খুশি। বেতন বকেয়া পরিশোধ করায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পক্ষ থেকে মেয়র আতিকুল ইসলামকে ধন্যবাদ।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি মেয়রের ঐকান্তিক ইচ্ছায় গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষে গত সপ্তাহে তাদের সম্পূর্ণ বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।