‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী’ উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির মাঠে বসেছে ঐতিহ্যপণ্যের মেলা। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও পিঠাসহ নানান কিছু। গতকাল শুক্রবার বিক্রি ভালো হলেও আজ শনিবার রাজধানীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কারণে এই ব্যবসায়ীদের ‘মাথায় হাত’।
গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশের কারণে আজ রাজধানীতে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন কম। শিল্পকলার প্রদর্শনী দেখতেও তেমন ভিড় ছিল না। যাঁরা সেখানে গেছেন, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো দর্শনার্থী।
আজ সরকার ছুটির দিনে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে বের হওয়া সরকারি কর্মকর্তা আসাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ছুটিটা কাজে লাগাতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তাঘাট এতটা নীরব ভাবতেও পারিনি। শিল্পকলা একাডেমিতে এসে দেখি, লোকজন খুবই কম।
শিল্পকলা একাডেমির মাঠে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। এসবের মধ্যে রয়েছে শতরঞ্জি, পাটপণ্য, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর হাতে তৈরি পোশাক, শীতলপাটি, জামদানির মতো জিনিসপত্র। এ ছাড়া খাবারের স্টলে ছিল শীতের নানা পিঠা। গত শুক্রবার পিঠা ও খাবারের দোকানে গড় বিক্রি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা থাকলে আজ তা ছিল ২ থেকে ৩ হাজার। লোকজন হবে ভেবে তৈরি করা খাবার নষ্ট হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে স্টলমালিকদের।
কথা হয় বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাঘরের মালিক মো. বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুটির দিনে শিল্পকলা একাডেমিতে খাবার সরবরাহ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান তিনি। কিন্তু আজ যে ঘটনা ঘটল তাতে তিনি হতাশ। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি আর মাটির নানা খেলনা নিয়ে এসেছিলেন সুশান্ত কুমার পাল। তিনি জানান, বেশি টাকা বিক্রি করতে পারেননি। শুক্র ও শনি ছুটির দুই দিন সাধারণত বিক্রি ভালো হয়। কিন্তু শনিবার একদম বিক্রি হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০২২’ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক এ শিল্পসমাবেশ নানা দেশ থেকে আসা শিল্পীদের বিচিত্র শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে। নানা রকম চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, ভিডিও আর্ট ও পরিবেশনশিল্পের এক মহাযজ্ঞ এই প্রদর্শনী। গত দুই বছর পৃথিবীতে যা কিছু ঘটেছে, শিল্পীর হৃদয়কে যা নাড়া দিয়েছে, শিল্পকর্মতে উঠে এসেছে সেই সব চিন্তা। করোনা, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক আগ্রাসন, দাসত্বের পুনর্ভাস, মানবমুক্তি, শান্তির মতো বিষয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন শিল্পীরা। অভিবাসন, জলবায়ু, প্রকৃতি ও পরিবেশের সংকটময় পরিস্থিতিও এসেছে শিল্পকর্মে।
এ বছর দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশের ৪৯৩ জন শিল্পী। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের শিল্পী ১৪৯ জন। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।