প্রতারণার টাকায় বাড়ি জমি, আছে কোটি টাকা

প্রতারণার টাকায় মাছের খামার, জমিসহ বিপুল সম্পদ। তাঁর লক্ষ্য থাকত ব্যবসায়ী ও ভালো বেতনের চাকরিজীবীরা।

মো. বিনিয়ামিন

‘আপা ভালো আছেন। আপনার ছেলে এখন কোথায় আছে?’ রাজধানীর কদমতলী এলাকার চিকিৎসক দিলরুবা আক্তারের মুঠোফোনে সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ফোন করে এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে বলা হয়, ‘আপনি ছেলের কোনো খোঁজ রাখেন না। তাকে আমরা মাদকসহ ধরেছি। এক লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেব। নইলে মাদক মামলা দিয়ে আদালতে পাঠাব।’

দিলরুবা বলেন, ‘আমি ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আম্মু আম্মু ডাক শোনানো হয়। ছেলের চিন্তায় ওই ব্যক্তির দেওয়া দুটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা পাঠাই। পরে বাসায় ফিরে ছেলেকে দেখে বুঝতে পারি, আমি প্রতারিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ফোন করে ওই ব্যক্তি তাঁকে এতটাই ব্যস্ত রাখেন যে ছেলের সঙ্গে ফোন করে কথা বলার বিষয়টি তাঁর মাথায় আসেনি।

এ ঘটনায় চিকিৎসক দিলরুবা কদমতলী থানায় প্রতারণার মামলা করেন। শুধু তিনি নন, এভাবে ডিবি পরিচয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষকে ফোন দিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মো. বিনিয়ামিন। এই অর্থে ময়মনসিংহের ত্রিশালের সতেরপাড়া গ্রামে ৩০ কাঠা জায়গা কিনে মাছের খামার করেছেন। দাদার নামে কিনেছেন পাঁচ একর জায়গা। পাঁচ শতাংশ জায়গায় বানাচ্ছেন পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি। কিনেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক। রয়েছে কাপড়ের ব্যবসা।

১৩ আগস্ট রাজধানীর মহাখালী ও বনানী কাঁচাবাজার এলাকা থেকে বিনিয়ামিন (৩৩) ও তাঁর সহযোগী শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। এ সময় তাঁর দুটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে এক কোটি সাত লাখ ও নগদ অ্যাকাউন্টে ৯ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। তবে তাঁর ব্যাংক হিসাবের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত দেড় বছরে তাঁর বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।

যেভাবে প্রতারণা

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, দৈবচয়নের ভিত্তিতে পুরোনো মুঠোফোনের প্রথম পাঁচ সংখ্যার সঙ্গে বাকি সংখ্যা মিলিয়ে ফোন ব্যবহারকারীর কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তাঁর লক্ষ্য থাকে ব্যবসায়ী কিংবা ভালো বেতনের চাকরিজীবী। এ ছাড়া নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমেও টাকা নিতেন। তাঁর সহযোগী শরিফুল বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নগদ ও বিকাশের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন।

ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কামরুজ্জামান সরদার বলেন, দিনে একাধিক ব্যক্তিকে ফোন দিতেন বিনিয়ামিন। কথা বলা অবস্থায় যদি ধরা খেতেন, তাহলে ওই নম্বরটি ব্লক করে দিতেন।

বাড়িতে ১২টি সিসি ক্যামেরা

ত্রিশালের সতেরপাড়া গ্রামের আদম আলী শিকদারের ছেল বিনিয়ামিন। আদম আলী ছিলেন সবজি বিক্রেতা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সতেরপাড়ার টিনশেড পুরোনো বাড়ির পাশেই পাঁচতলা বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। বাড়িটির দোতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, আগে বাইরে থাকলেও তিন বছর ধরে গ্রামেই বেশি থাকেন বিনিয়ামিন। নিজের নিরাপত্তায় বাড়ি ও আশপাশে ১২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে পালিয়ে যেতে পারেন।


[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কামরান পারভেজ]