পুরান ঢাকায় ৩৫ বছরে ৯৬টি পুকুর উধাও

রাজধানীর পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষার আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি সেখানকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)
ফাইল ছবি

সরকারি সংস্থা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে ১৯৮৫ সালেও ঢাকায় দুই হাজারের মতো পুকুর ছিল। ৭০ হাজার হেক্টর আয়তনের এসব জলাভূমি মাছ চাষ ছাড়াও গোসলসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। পুরান ঢাকায় ছিল ১২০টির মতো পুকুর। আশপাশ এলাকার তাপমাত্রা কমাতে এসব পুকুরের ভূমিকা ছিল।

বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) ঢাকার পুকুর ও জলাশয় নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকায় এখন সাকল্যে ২৪১টি পুকুর কোনোমতে টিকে আছে। আর পুরান ঢাকায় টিকে আছে মাত্র ২৪টি। বাকি ৯৬টি পুকুরই ভরাট হয়ে গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ২৪১টি পুকুর দখলমুক্ত অবস্থায় টিকে আছে তার বড় অংশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরসহ নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে। এ জন্য প্রভাবশালীরা দখল করতে পারছে না। আর ৮৬টি পুকুরের অস্তিত্ব থাকলেও তা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সরকারি সংস্থা দখল করে আছে সাতটি পুকুর আর বেসরকারি সংস্থা দখল করেছে ৭৯টি।

গবেষণাটির নেতৃত্বে ছিলেন আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের পুকুর ও জলাশয়গুলো একেবারে দুর্বৃত্তায়নের মধ্য দিয়ে দখল ও ভরাট করা হচ্ছে। দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে জলাভূমি রক্ষার কথা বলা হলেও খোদ সরকারি সংস্থাগুলোকে এসব দখলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখছি।’

প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার জলাভূমি ভরাটের ১১টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে জলাশয় ভরাট, সরকারি সংস্থাগুলোর জলাশয় সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে না জানা ও অবহেলা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে মূলত দায়ী করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি শহরে ১৫ শতাংশ জলাশয় থাকা উচিত। আর ঢাকায় আছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। জলাশয়গুলো না থাকায় শহরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিও দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, আরও নামবে। এতে শহরে মিঠাপানির সংকট তীব্রতর হবে।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ব্লু রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের (সিবিআরডি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা শহরের সামগ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে পুকুর ও জলাশয়গুলো দ্রুত দখলমুক্ত করতে হবে।