‘ভ্যান আসবে না জানলে দেড় ঘণ্টা পথে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম না’

বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাংস, ডিম, দুধের ভ্যান না এলেও সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে মৎস্য অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যের মাছের ভ্যান দেখা গেছেছবি: প্রথম আলো

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ ভ্যান থেকে সুলভ মূল্যে পণ্য কিনতে আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অপেক্ষা করেছেন অনেকে। তবে পণ্য নিয়ে ট্রাকটি আসেনি।

বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে খালি ব্যাগ হাতে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। এই দলে ছিলেন লাবণী মণ্ডল। তিনি আগেও কয়েকবার এই সুলভ মূল্যের ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রথম রোজায় এই ট্রাক থেকে দুধ, ডিম আর খাসির মাংস কিনেছি এখান থেকেই। ভ্রাম্যমাণ ভ্যানটি আজ আসবে না জানলে সকাল থেকে এই দেড় ঘণ্টা পথে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম না।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানটি সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের কাছে থাকবে জানতেন অনেকে। তবে সকাল ১০টায় সেখানে ভ্যান আসেনি। বাজারের দোকানদারেরা জানান, ভ্যান এখানে কখনো আসে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানটি অধিকাংশ সময় থাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঝামাঝি সড়কে। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ব্যাগ হাতে নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন মানুষ।

অপেক্ষারত মানুষেরা বললেন, ‘ভ্যান এলে সাধারণত এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। সুলভ মূল্যে কেনার চাহিদা অনেক বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষও জড়ো হচ্ছেন এই অপেক্ষার লাইনে।’

সেগুনবাগিচায় দায়িত্বে থাকা মনিটরিং সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ক্যাশিয়ার মনির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যান নিয়ে বের হওয়ার শেষ সময়ে তাঁদের ধোলাইখাল যেতে বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও তাই হয়েছে। সরকারি ছুটির এই তিন দিন সুলভ মূল্যের পণ্য সেগুনবাগিচার বদলে ধোলাইখালে বিক্রি হবে বললেন তিনি।

মাংস, ডিম, দুধের ভ্যান না এলেও অবশ্য সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে মৎস্য অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যের মাছের ভ্যান দেখা গেছে। সেখানে কেজিপ্রতি রুই মাছ ২৪০ টাকা, পাঙাশ ১৩০, পাবদা ৩৩০ এবং তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে।

পাশের আফতাব গ্রুপের স্থানীয় কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানালেন, রোজ সকালেই এই সুলভ মূল্যের মাছের ভ্যান আসছে এখানে। আর ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

পবিত্র রমজান মাস কেন্দ্র করে সুলভ মূল্যে রাজধানীর ২৫টি স্থানে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ ছাড়া অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুধু গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে মিরপুর শাহ আলী বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর ও কাজী আলাউদ্দিন রোডে (আনন্দবাজার)। আর মৎস্য অধিদপ্তর মাছ বিক্রি করছে বঙ্গবন্ধু চত্বর (খামারবাড়ি), মিরপুর-১ (ঈদগাহ মাঠ), সেগুনবাগিচা বাজার, মেরুল বাড্ডা বাজার, মুগদাপাড়া (মদিনাবাগ বাজার), যাত্রাবাড়ী (দয়াল ভরসা মার্কেট), মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নার) ও পলাশী মোড়ে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাজধানীতে মোট ৫ হাজার কেজি গরুর মাংস, ২০০ কেজি খাসির মাংস, ১ হাজার ২০০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার (চামড়া ছাড়া), ৪০ হাজার ডিম এবং ৩ হাজার লিটার দুধ বিক্রি করা হয়েছে। বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম দামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, দুধ ৮০ টাকা লিটার ও এক ডজন ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ টাকায়। তবে যে পাঁচটি জায়গায় (স্থায়ী বাজার) শুধু গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে, সেখানে দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা করে।