দেখেশুনে কিনছেন তাঁরা

ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে এসেছেন মা ও মেয়ে। গতকাল ধানমন্ডি এলাকার একটি বিপণিবিতানে শাড়ি দেখছেন তাঁরা
ছবি: খালেদ সরকার

হাঁটু পর্যন্ত লম্বা দৈর্ঘ্য বা পা পর্যন্ত লম্বা কামিজ, কাফতান ছাঁটের পোশাক, দেশীয় ধরনে তৈরি টপ-প্যান্ট, সিঙ্গেল কুর্তা, সব ধরনের পোশাকে কটির ব্যবহার, বাহারি শাড়ি ও ব্লাউজ—ঈদবাজারে নারী ও মেয়ে ক্রেতাদের জন্য ডিজাইনাররা সব প্রস্তুত করে রেখেছেন। আর ক্রেতারা বাজেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পছন্দের পোশাকটি কেনার চেষ্টা করছেন।

মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা শামীমা নাজ জামান আড়ং থেকে কাঁথা স্টিচের একটি মসলিন শাড়ি কিনেছেন। ঈদের শাড়ি বলে বাজেটটাও একটু বেশিই ছিল। এইচএসসি পড়ুয়া মেয়ে জুমাইনা রহমানের পোশাকও কেনা শেষ। কোচিংসহ বিভিন্ন জায়গায় পরতে পারবে এমন পোশাকই কেনা হয়েছে।

তারপরও মেয়ের কোচিংয়ের ফাঁকে মা ও মেয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির সানরাইজ প্লাজায় বিভিন্ন দোকানে ঢুঁ দিচ্ছিলেন। ঈদে উপহার দিতে হয় এমন তালিকাটাও তো একেবারে ছোট নয়। বুধবার সানরাইজ প্লাজাতেই কথা হয় এই মা ও মেয়ের সঙ্গে।

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, সানরাইজ প্লাজা, রাপা প্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ দিয়ে ঈদের বাজারের খানিকটা আমেজ পাওয়া গেল। বিক্রেতারা জানান, জিনিসপত্রের দাম বেশি, কাঠফাটা রোদ, সড়কে জ্যাম, নারীদের শাড়ি পরার আগ্রহ কমে যাওয়া—সবকিছুর প্রভাব পড়েছে ঈদবাজারে। তাই ঈদবাজারে নারী ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে হাঁসফাঁস করা গরমে দেশীয় আউটলেটের ডিজাইনার ও বিক্রেতাদের মুখে হাসি। তাঁরা বলছেন, ঈদবাজারের ক্রেতারা সহনীয় দাম ও গরমে আরাম পাবেন—এমন কাপড় খুঁজতে ঢুঁ দিচ্ছেন দেশীয় আউটলেটে।

দেশীয় আউটলেট দেশালের স্বত্বাধিকারী ও প্রধান ডিজাইনার ইশরাত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদে গরমের কথা চিন্তা করে নারী ও মেয়েদের পোশাকে প্রকৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জলের ধারা, বুনো ফুলের নকশার পাশাপাশি মেটে, আকাশের নীল, পাতার সবুজ—এসব রং বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে চোখের আরামের কথা চিন্তা করে। কামিজের লম্বা আগের মতোই হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আছে। তবে হাতায় ছড়ানো, কুচি দেওয়া অথবা আকারে ছোট—এভাবে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়ির ক্ষেত্রে আঁচলে করা হয়েছে নানান কারুকাজ।

বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বললেন, মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে ফ্রক কাট, স্কার্টের বিক্রি বেশি। মৃগ নয়নী, বালুচরি, জ্যাকেট পাড়—এ ধরনের শাড়িগুলো ভালো চলছে।

ডিজাইনাররা জানান, বয়নশিল্পীদের দক্ষতার কারণে যুগ যুগ ধরেই এই অঞ্চলে বোনা জামদানি, বেনারসি, মণিপুরি, রাজশাহী সিল্ক ও টাঙ্গাইলের শাড়ির কদর এবারও আছে। শাড়ির পাশাপাশি ব্লাউজের নকশায় জারদৌসি ও কারচুপির কাজ বেশ জনপ্রিয়।

ঈদের পোশাকের দাম বাড়া প্রসঙ্গে ডিজাইনার ইশরাত জাহান ও বিপ্লব সাহা দুজনই বললেন, কারিগরের মজুরি, কাঁচামালসহ সবকিছুর ক্ষেত্রেই বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। তাই পোশাকের দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে পোশাকের দাম বিভিন্নভাবে কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন সিঙ্গেল পিস কামিজ বিক্রি হচ্ছে। কেউ চাইলে বাড়িতে থাকা কোনো পায়জামা ও ওড়না দিয়ে এ কামিজ পরতে পারবেন। একইভাবে যে শাড়িতে আগে হাতের কাজ বা ডলার বসানো হতো, এবার দামের কথা চিন্তা করে হয়তো কোনো একটা বাদ দেওয়া হয়েছে।

ঈদ সামনে রেখে অনলাইনে পোশাক বিক্রি করা নারী উদ্যোক্তারাও তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সুতলির কর্ণধার রিফাত আনোয়ার (লোপা) জানান, তিনি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আনা কলমকারি শাড়ি বিক্রি করেন। এ শাড়ির দাম ২ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে।

এ শাড়ি গরমে খুব আরামদায়ক। এ ছাড়া কলমকারি কাপড় দিয়ে বানানো কুর্তাও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এ কাপড় দিয়ে বানানো ব্লাউজে কুশিকাঁটার নকশা করে বা বিভিন্নভাবে তাতে নতুনত্ব আনা হয়েছে।

ঈদে সবারই চাওয়া থাকে পোশাকটা সবচেয়ে সুন্দর হবে। তাই বারবার পরখ করা লাগে। বুধবার সানরাইজ প্লাজায় বিশ্বরঙয়ের শোরুমে দুজন ক্রেতা দীর্ঘক্ষণ জহুরির চোখ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে একটি শাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলেন। প্যাকেট করে তা কাউন্টারেও পৌঁছে গেল।

তখন একজন আরেকজনকে ডেকে বললেন, ‘ভাবি, এই শাড়িটার রংটা মনে হয় একটু বেশি সুন্দর।’ শোরুমের নারী বিক্রয়কর্মী নিজের শরীরে নতুন শাড়ি পরার মতো করে কুচি দিয়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার তাঁরা দুজনই মাথা নেড়ে সায় দিলেন, নাহ, তাঁরা যেটা পছন্দ করেছেন, সেটাই বেশি সুন্দর।