দুর্গোৎসবে তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি হিন্দু মহাজোটের

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে হিন্দু মহাজোট বিভিন্ন দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ছবি: আশিকুজ্জামান

শারদীয় দুর্গোৎসবে তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলা পর্যন্ত মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারেরও দাবি করেছে তারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে হিন্দু মহাজোট এসব দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে পূজার অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে সরকারি ছুটির দাবি করেন। এ ছাড়া সব স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে সরকারি খরচে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য সমান প্রয়োগের দাবিও জানানো হয়।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ঠ বক্তব্য না এলে আগামী ১৩ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশব্যাপী হিন্দু মহাজোট মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে পাঁচ দিনব্যাপী ধর্মীয় কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থেকে ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই দুর্গাপূজা করতে হয়। দিন–রাত পূজার কাজে ব্যস্ত থেকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সার্থকভাবে দুর্গাপূজা সম্পাদন করতে হয়। পাঁচ দিনের দুর্গাপূজায় মাত্র এক দিন সরকারি ছুটি, যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে পূজার আনন্দ ও ধর্মীয় যজ্ঞ শেষ করতে পারেন না। এমনকি পরিবার–পরিজনের সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতেও পারেন না।

জোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি বলেন, ‘আশঙ্কা করছি, সাম্প্রদায়িক শক্তি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে হামলা করতে পারে। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ফরিদপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলায় আশঙ্কা করছি, পূজা যত ঘনিয়ে আসবে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা তত বাড়বে।’

নির্বাহী মহাসচিব বলেন, দুর্গাপূজা ও নির্বাচন—এ দুটি বিষয় নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। কারণ, পূজার আগে ও পরে হিন্দু সম্প্রদায় ও তাঁদের স্থাপনার ওপর আঘাত নিয়মিতভাবে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা বানানোর সময় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। তাই এবার পূজামণ্ডপ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থাপনা সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষবস্তুতে পরিণত হতে পারে।

মহাসচিব আরও বলেন, ‘নড়াইলের লোহাগড়ায় ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অজুহাতে আকাশ সাহাকে ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করে এখনো জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।

অথচ নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রকাশ্যে হিন্দু ধর্মকে নিয়ে অনেকে কটাক্ষ করে কথা বলছেন, যেখানে রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য সমান প্রয়োগের দাবি জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহাজোটের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায়। বক্তব্য দেন প্রধান সমন্বয়কারী সোনালী দাস, হিন্দু যুব মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী পংকজ হালদার, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস প্রমুখ।