কীভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর হলো, তা দেখতে চাই: হাইকোর্ট

হাইকোর্টফাইল ছবি

হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সম্পত্তিটি কীভাবে হস্তান্তর হলো, তা আমরা দেখতে চাই। গুলশান–২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়িটি আব্দুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই ভূমি বা প্লটের মালিকানা হস্তান্তর ও দখলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি এবং দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলবিষয়ক শুনানিতে আজ বৃহস্পতিবার আদালত এ কথা বলেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার। রাজধানীর গুলশান-২–এ অবস্থিত পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি দখলে রাখার অভিযোগ তুলে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক (বর্তমানে সংসদ সদস্য)। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে বাড়িসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এরপর রাজউক নথি দাখিল করে। পরে বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় ১৭ জানুয়ারি বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত ওই জমি বা প্লটের চেইন অব টাইটেল (মালিকানা হস্তান্তর, রূপান্তর) ও দখলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে পক্ষগুলোকে হলফনামা (এফিডেভিট ইন অপজিশন) দাখিল করতে নির্দেশ দেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে দুদককে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক এবং সালাম মুর্শেদীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

অনুসন্ধান করে মামলা করেছে দুদক

শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স (বাস্তবায়ন প্রতিবেদন) দাখিলের জন্য অনুমতি চাচ্ছি। দুটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনও রয়েছে। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যও রয়েছে।’

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ‘কপি দেখতে হবে। নট টুডে (এক দিনের জন্য মুলতবি) রাখা যেতে পারে। আজ কপি (বাস্তবায়ন প্রতিবেদন) দেওয়া হলে, রোববার শুনানি করতে পারব।’

একপর্যায়ে সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘হলফনামা (দুদকের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন) করার পর কপি দেবে, তারপর পড়ব। এরপর জবাব দিতে হবে। মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন রাখা যেতে পারে।’

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘মামলা হয়েছে কি? সব কাগজপত্র দাখিল করেছেন?’ তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, মামলার এজাহারও সংযুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদনের পর যে এফআইআর হয়েছে, তা–ও দেওয়া হয়েছে। সব আছে। তারপরে যদি আদালত মনে করেন আরও কিছু দিতে হবে, তাহলে তা দাখিল করা হবে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি দেওয়া হয়নি। সংযুক্তিগুলোর প্রয়োজন হবে।

আন্তরিকতা থাকলে এত সময় লাগে নাকি?

আগের আদেশ তুলে ধরে আদালত বলেন, চেইন অব টাইটেল (মালিকানা হস্তান্তর, রূপান্তর) দাখিল করতে বলা হয়েছে। যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি এক বছর, দুই বছর লাগে নাকি? আন্তরিকতা থাকলে লাগে না।

এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, চেইন অব টাইটেল দেখাতে হলে অবশ্যই দেখাব। এখানে গণপূর্ত ও রাজউক সম্পৃক্ত, রাজউকের কী অবহেলা আছে—এ বিষয়গুলো অনুসন্ধানে এসেছে। দুদকের কাছে যেসব নথি আছে, তার ভিত্তিতেই এজাহারটি (মামলা) দায়ের করা হয়েছে। তাই এখানে চেইনটা পাওয়া যাবে।

আদালত বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখতে চাই। কীভাবে সম্পত্তি হাস্তান্তর হলো, তা দেখতে চাই।’ পরে আদালত মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন রাখেন।

মামলায় সালাম মুর্শেদীর নাম নেই

পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশের পর বাড়িটি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বাড়িটির বিষয়ে জাল–জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষীর ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পেয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করে। এর মধ্যে সালাম মুর্শেদী নেই। এখন তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে আরও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁরাও চলে আসবেন। আর যে ১১ জনের নামে মামলা হয়েছে, তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে, তাঁরা বাদ যাবেন।