ভোটাধিকার ছাড়া থাকে না মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে গতকাল শাহবাগে লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের এই সমাবেশ হয়েছে। 

ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সমাবেশ। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে
ছবি: আশরাফুল আলম

লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের এক সমাবেশ বক্তারা বলেছেন, ভোটাধিকার ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এটাই শাসনের একমাত্র বৈধতা। রাতের ভোটের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার তাঁদের কোনো বৈধতা নেই। 

ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহবাগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মানুষের অধিকারের একটা প্রাথমিক জায়গা হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আমাদের ভোটের অধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে সমাবেশ করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ 

স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনেরা উন্নয়নকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন বলে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ছিল, এখানকার শিক্ষকেরা একসময় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক এখন স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন শিক্ষকদের কোনো বিবৃতি দিতে দেখি না।’ তাঁর মতে, দেশে লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। 

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ–এর সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, দেশের মানুষ একটা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করছেন। সেই ভয়ের মধ্যে রয়েছেন লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক ও বুদ্ধিজীবীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। তিনি বলেন, সেই ভয় এখন সংক্রমিত হচ্ছে উল্টো দিক থেকেও। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন। তাঁর এই ভয় সংক্রমিত হতে থাকবে। এতদিন তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, চিন্তাশীল ও মননশীল মানুষের গণতান্ত্রিক চিন্তা প্রকাশের বিরুদ্ধে যে ভয়ের সংস্কৃতি তাঁরা তৈরি করেছেন; সেই ভয় এখন তাঁদের মধ্যেও সংক্রমিত হবে। 

সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে নারী আন্দোলনকর্মী ফরিদা আক্তার বলেন, ‘লেখক, শিল্পীদের মধ্যে যে বিভাজন আছে, সেগুলো আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। এমন না যে বর্তমান সরকার যাচ্ছে না বলে আমরা ভোট দিতে পারছি না। আসলে রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই এমন করে তৈরি করা হয়েছে যে আমরা ভোট দিতে চাইব, সেই ভোটের বাক্সটা রাতেই ভরে যাচ্ছে।’

লেখক রাখাল রাহা বলেন, ভোটাধিকার ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। যে দলই রাষ্ট্র পরিচালনা করুক না কেন, লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিক কখনোই ভোটাধিকারের বিপক্ষে যেতে পারেন না। 

শিল্পী অরূপ রাহী বলেন, ‘দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা নতুন করে বৈষম্য তৈরি করছে। উন্নয়ন একটা বড় রাজনীতি, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমরা উন্নয়ন চেয়েছি, সরকার উন্নয়নের খেলা দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছে।’

লেখক মাহা মির্জা বলেন, ‘আজকে আমরা যখন ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি। ঠিক এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ছয় শ থেকে সাত শ মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন কারাগারে নির্মম জীবন কাটাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষ এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক রয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারিনি।’

সমাবেশে এসে সংহতি জানান আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। এহসান মাহমুদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষক তাজুল ইসলাম, শিক্ষক ইফতেখার আলম, কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম, কবি সাখাওয়াত টিপু, কবি সৈকত আমিন, লেখক ফিরোজ আহমেদ, প্রকাশক মাহবুব রহমান, গীতিকবি লতিফুল ইসলাম, বাচিকশিল্পী দীপক গোস্বামী ও সংগঠক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।