প্রয়াত চিত্রশিল্পী ও অধ্যাপক মুর্তজা বশীরকে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের একটি পদ পুনর্বিন্যাসের নির্বাচনী বোর্ডে অংশ নিতে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে মুর্তজা বশীরের নামটিও ভুল বানানে (মূর্তজা বশির) লেখা হয়েছে।
গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার মুর্তজা বশীরকে ওই চিঠি পাঠান। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুর্তজা বশীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান। দেশের প্রথম প্রজন্মের খ্যাতিমান এই চিত্রশিল্পী মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ছেলে।
প্রয়াত মুর্তজা বশীরের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘ভাস্কর্য বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের লক্ষ্যে নির্বাচনী বোর্ডের একটি সভা আগামী ৩ অক্টোবর বিকেল চারটায় উপাচার্যের অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে৷ নির্বাচনী বোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসেবে অনুগ্রহপূর্বক এ সভায় উপস্থিত থাকতে আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে৷ অনিবার্য কারণে আপনি সভায় উপস্থিত হতে না পারলে প্রার্থীর পদোন্নতি সম্পর্কে আপনার লিখিত মতামত সরাসরি অথবা গোপন খামে উপাচার্যের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করছি।’
মৃত্যুর দুই বছর পর চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন চিঠি পাঠানোর ঘটনায় বিব্রত তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ চিঠিটি পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে মুর্তজা বশীরের মেয়ে মুনীরা বশীর লেখেন, ‘কী করা উচিত? বাবা কি কবর থেকে সভায় উপস্থিত হয়ে লিখিত মতামত দেবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অব্যবস্থাপনায় কী করণীয়? কী গালি দেওয়া উচিত? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকার কি জবাবদিহি করবেন?’
পরে মুনীরা বশীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুর্তজা বশীর শিল্প-সাহিত্যের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন৷ তিনি মারা গেছেন দুই বছর হয়ে গেল৷ অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁর নামে চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছে৷ এটা অপমান এবং একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা ও মূর্খতার শামিল৷ মুর্তজা বশীরের মৃত্যুর পর এমন আরও কিছু চিঠি এসেছে৷ সেগুলো আমরা খুলে দেখিনি৷ কিন্তু এবার আর বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে ফেসবুকে পোস্ট করেছি৷’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলছেন, এখনো নির্বাচনী বোর্ডের সভা বসেনি। সুতরাং বিষয়টি সংশোধনের সুযোগ রয়েছে৷ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রশাসন-১) মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি৷
মিজানুর রহমান দাবি করেন, বিষয়টি অসাবধানতাবশত ঘটতে পারে৷ এ ধরনের বোর্ড অনেক আগে থেকে ঠিক করা থাকে৷ এ ধরনের চিঠি পাঠানোর সময় কেউ মৃত হলে বোর্ডের কমিটির নামের পাশে মৃত লিখে দেওয়া হয় এবং ওই ব্যক্তিকে চিঠি পাঠানো হয় না৷ এ ক্ষেত্রে যিনি চিঠি পাঠিয়েছেন, তিনি হয়তো বিষয়টি খেয়াল করেননি৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে চিঠি দেওয়ার আগে জেনেশুনে এবং কথা বলেই দেওয়া উচিত৷ এটি একটি ভুল৷ এমন ভুল তো আর সচরাচর হয় না, মাঝেমধ্যে হয়তো হয়৷ তবে মুর্তজা বশীরের মতো বিখ্যাত মানুষের ক্ষেত্রে এমন ভুল হওয়া উচিত হয়নি৷