এবার শুরুটা বেশ ভালো
শুরু হলো অমর একুশের বইমেলা। ছুটির দিনের বইমেলা মানে বেলা গড়ানোর পর শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত অগুনতি মানুষের স্রোত। ঠিক ততটা না হলেও চিরচেনা সেই দৃশ্যের অনেকটাই ফিরে এল আবার ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে। বাংলা একাডেমির আয়োজনে জাতির মেধা–মনন ও সৃজনশীলতার সবচেয়ে বড় মাসব্যাপী আয়োজন শুরু হলো গতকাল শনিবার।
বাংলা একাডেমি চত্বর এবং অপর পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসেছে বইমেলা। স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটানো বিপুল আত্মত্যাগের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে এবার বইমেলার মূল ভাবনা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুসারে সরকারপ্রধান হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন। এরপরই সর্বসাধারণের জন্য মেলার দ্বার উন্মোচন করে দেওয়া হয়।
একাডেমি জানিয়েছে, এবার মেলার পরিসর ও অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একাডেমি চত্বরে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার স্টল। বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে। এবার মোট ৭০৮টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে।
বইমেলার সময়সূচি বরাবর যা থাকে, তেমনই আছে। কর্মদিবসে মেলা চলবে বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। তবে সাড়ে আটটার পর আর প্রবেশ করা যাবে না। ছুটির দিনে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত চলবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত করা হবে।
গতকাল মেলার উদ্যান অংশে দেখা গেল খুব অল্প কিছু স্টল-প্যাভিলিয়নে বই তোলা হয়েছে। অনেক স্টলের ভেতরে চলছে বইয়ের তাক তৈরি ও রং লাগানোর কাজ। বেশ কিছু স্টলে নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বাংলা একাডেমির যে দুটি প্যাভিলিয়ন রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে, সেখানে রং লাগানোর কাজ শেষ হয়নি। একই অবস্থা টিএসসি গেট প্রান্তের তথ্যকেন্দ্রের। ‘মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ’, ‘লেখক বলছি মঞ্চ’–এর খুঁটির ওপরে ত্রিপলের ছাউনি চাপানোর কাজ চলতে দেখা গেল। এমনকি চলাচলের জন্য স্টলগুলোর সামনে দিয়ে ইট বিছিয়ে পথ তৈরির কাজও শেষ হয়নি। বেশ কিছু স্থানে স্তূপাকার বালু ও ইট চোখে পড়ল। মিস্ত্রি আর শ্রমিকেরা ব্যতিব্যস্ত অবকাঠামো নির্মাণের কাজে। পূর্ব পাশে তৈরি করা হচ্ছিল খাবারের স্টলগুলো। মাঠজুড়ে ছত্রখান হয়ে আছে বাঁশ, কাঠ আর নানা রকমের বোর্ডের টুকরা, লোহালক্কড়, রঙের খালি কৌটাসহ হরেক ধরনের আবর্জনা।
প্রথম দিনেই যারা স্টলে বই সাজিয়েছে, তাদের কিছু কিছু বিক্রিও হয়েছে। অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন, অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথের সঙ্গে কথা হলো। মেলায় প্রথম দিনের লোকসমাগমে তাঁরা বললেন, এবার শুরুটা বেশ ভালো। নতুন বইয়ের দামও বিশেষ বাড়েনি। দেশে একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে বিক্রিও ভালো হবে বলেই তাঁরা আশাবাদী।
মেলায় এবার প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়ন টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সামনেই পড়বে। এখানে এক সারিতে আরও আছে ইউপিএল, অবসর, মাওলা ব্রাদার্স, শোভা প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন। প্রথমার প্যাভিলিয়নে সাজসজ্জা, বই তোলার কাজ প্রথম দিনেই সম্পন্ন। গ্রন্থানুরাগীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথমার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানালেন, কয়েকটি নতুন বই এসেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে আসিফ নজরুলের লেখা শেখ হাসিনার পতনকাল, আনোয়ারা সৈয়দ হকের উপন্যাস সময় বহিয়া গেল। প্রথম দিন হিসেবে বিক্রিও মন্দ নয়। রাজনীতি বিষয়ের বই বেশি বিক্রি হয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে প্রাণের মেলাখ্যাত বইমেলা সৃজনে–আনন্দে মুগ্ধতা ছড়াবে, সেটই সবার প্রত্যাশা।