সংখ্যালঘুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি আ.লীগ সরকার

বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেওয়া সংখ্যালঘুবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহের অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সকাল সন্ধ্যা গণ–অনশন করে। শাহবাগ, ২২ অক্টোবর
ছবি: সাজিদ হোসেন

প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। একইভাবে গত নির্বাচনের আগে দেওয়া সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ান করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। অথচ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যেসব দাবিতে গণ–অনশন করছে, তা বহু আগেই বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ–অনশনে সংহতি জানিয়ে এসব কথা বলেন রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা। কিন্তু বর্তমান সরকার এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি বলে জানাচ্ছেন ঐক্য পরিষদের নেতারা।

ঐক্য পরিষদের এই গণ–অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ইতিমধ্যে বৈষম্য বিলোপ আইন সংসদে উঠেছে। আশা করি, এটি অবিলম্বে পাস হবে।

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার কি করবে, কতখানি করবে, আমার জানা নেই। আমাদের তরফ থেকে নিশ্চিতভাবে আগামী অধিবেশনে যখন সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, তখন এসব প্রস্তাব নিয়ে আসব।

আরও পড়ুন

পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রতি মুহূর্তে কথা বলার চেষ্টা করছি। এখন প্রয়োজন সবাইকে আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ঐক্য পরিষদ নির্বাচনের আগেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে আছেন বলেও জানান রাশেদ খান মেনন।

প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায় মন্তব্য করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এমন সব দাবিতে গণঅনশন হচ্ছে, যেসব দাবি অনেক প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়নি।

স্বপ্নের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এখন অনেক দূরে বলেও মনে করেন শামসুল হুদা। তিনি বলেন, এ রাষ্ট্র যে অনাচার–অবিচার করে আসছে, সচেতন মানুষ হিসেবে আমরা সেগুলোকে সমর্থন ও সহ্য করেছি। প্রতিবাদ করিনি বা প্রতিবাদ করার মতো করে প্রতিবাদ করতে পারিনি। সে জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয়।

গণ–অনশনে সংহিত জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার একটি বিচার শেষ হয়নি। যদি একটি বিচার হতো, তাহলে এই সহিংসতা করার যে প্রচেষ্টা, তা বন্ধ হতে পারত।

ঐক্য পরিষদ নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে চলতি ২৪ মার্চ প্রায় আড়াই লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর করা একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়। তারপর ৯০ দিন পার হয়ে গেলেও সেসব বাস্তবায়নের উদ্যোগ না দেখা যাওয়ায় ১৬ জুলাই সারা দেশে তারা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। এসব দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজকে দেশব্যাপী গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।