‘নিবন্ধন ও নকশা ছাড়াই’ ভবন নির্মাণ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে মারমুখী আচরণ

রাজউকের নিবন্ধন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছে নিউগিনি প্রপার্টিজ লিমিটেড। রাজধানীর জোয়ারসাহারা এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর জোয়ারসাহারা এলাকায় নকশা অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছে নিউগিনি প্রপার্টিজ লিমিটেড নামের একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনা ও বুকিং দেওয়া ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে ৮ এপ্রিল সেখানে অভিযানে যান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত পরিচালনা করেন রাজউকের জোন–৩ এর পরিচালক তাজিন সরোয়ার। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্মাণাধীন ভবনের অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করতে পারেননি। উল্টো মারমুখী আচরণের শিকার হয়ে তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে।

এ ঘটনায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। রাজউকের ইমারত পরিদর্শক শেখ আতিফ হোসেন বাদী হয়ে ৯ এপ্রিল মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মশিউর রহমান ও মজিবুর রহমানকে। এজাহারে তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ, নিবন্ধন, অনুমোদন ও নকশাবহির্ভূত নির্মাণকাজ পরিচালনা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ সরকারি কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাজউকের পরিচালক তাজিন সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিউগিনি প্রপার্টিজের রাজউকের নিবন্ধন নেই। এটা বিশাল অপরাধ। অনেক ভুক্তভোগী আমার কাছে এসেছেন। অভিযুক্তরা কীভাবে এ ভবন নির্মাণ করছে, কে অনুমোদন দিয়েছে; সেসব কিছুই জানি না।’

ঘটনার বিষয়ে তাজিন সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন গেলাম তাঁরা মারমুখী অবস্থায় এসে বলেন, আমরা মোবাইল কোর্ট মানি না। তাঁদের অবৈধ স্থাপনা ছিল, তিনটি ভবনের মধ্য একটির নকশা শো করেছেন, অন্যগুলোতে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এখনো তাঁরা কোনো নকশা দেখাতে পারেননি।’

এখানে অভিযানে গিয়ে মারমুখী আচরণের শিকার হয়েছে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর জোয়ারসাহারা এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

তাজিন সরোয়ার আরও বলেন, নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ আসামিদের কাছে রাজউকের পরিদর্শকেরা কয়েকবার গেছেন। নোটিশও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার ভবনের নকশা দেখতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু নোটিশের জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত গেলে আসামিরা মারমুখী আচরণ করেছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সাধারণত সময় বেঁধে দিয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামায় সই (আন্ডারটেকেন) নেন। কিন্তু আসামিরা কোনোভাবেই তা দিতে রাজি হননি বলে জানান তাজিন সরোয়ার।

তাজিন সরোয়ার জানান, নির্মাণাধীন ওই তিন ভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ডেসকোকে নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বলা হয়েছিল, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না হয়। কিন্তু ওই রাতেই বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে বাতি জ্বালিয়ে নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন আসামিরা।

অভিযোগের বিষয়ে নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রাজউকের অনুমোদন নিয়ে নিয়ম মেনেই কাজ করছিলাম। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একটি পক্ষের হয়ে অভিযান চালাতে এসেছিলেন।’

মামলার বাদী ও রাজউকের ইমারত পরিদর্শক শেখ আতিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় মামলা করা হয়েছে।

নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও মামলা হয়েছে। এলাকায় জমি দখল ও চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট বাবুল হোসেনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত বছর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা হয়। বাবুল হোসেনের করা ওই মামলায় নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে ‘ভূমিদস্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় রাজউক মামলা করেছে। যদি আবাসন প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন না থাকে, নির্মাণাধীন ভবনের নকশায় ত্রুটি থাকে—দুটোই গর্হিত অপরাধ। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।