বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের অবহেলা লক্ষ করা যাচ্ছে। এত দিনেও এই দায়িত্ব যথাযথভাবে নিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করে।
‘ইম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্স’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্মের এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তাঁরা কিছু পর্যবেক্ষণ ও দাবি তুলে ধরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আহত ব্যক্তিরা সরকারের কাছে তাঁদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, আর সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ, তাঁরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, সেই বৈষম্য এখনো দূর হয়নি। চিকিৎসার জন্য তাঁদের কেন সংবাদ সম্মেলনে আসতে হবে? তাঁরা কি অবহেলার পাত্র হয়ে গেছেন?
ইম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্স বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। এটি আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যাটফর্মটি ছয়টি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো—এক. প্রত্যেক রোগীর জন্য পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আহত রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য একটি ‘জরুরি হটলাইন সেবা’ চালু করতে হবে। দুই. দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো বা বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং চিকিৎসকদের আনার জন্য একটি সরকারি কাঠামো ঘোষণা করতে হবে। তিন. প্রত্যেক আহত ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তাঁদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চার. হাসপাতাল ও চিকিৎসাসংক্রান্ত অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি বরাদ্দ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করতে হবে। পাঁচ. বাংলাদেশের ছাত্র–জনতা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উপায়ে তার কার্যকর রূপ দিতে হবে। ছয়. ছাত্র-জনতার সঙ্গে সরকারের নিয়মিত উন্মুক্ত সংলাপ শুরু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিজেদের সরেজমিন কাজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। বিদেশ থেকে কেবল একটি চিকিৎসক দল আনা হয়েছে। এই মুহূর্তে আর কোনো চিকিৎসক দল আনা হবে কি না, এ বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হচ্ছে না। ৫ আগস্টের পরও হাসপাতালগুলোয় আহত ব্যক্তিদের পুরোপুরি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
ইম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটার্স প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের আরও পর্যবেক্ষণ, হাসপাতালগুলোয় বিনা মূল্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি অনুরোধ সত্ত্বেও বিল না কমানোর ঘটনা ঘটছে। অনেকগুলো হাসপাতাল পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, সেসব জায়গায় সরকার ঘোষিত ‘ফ্রি চিকিৎসা’ দেওয়া হচ্ছে নিজেদের সমাজসেবায় আসা দান এবং ব্যক্তিগত অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে। কিন্তু এভাবে হাসপাতালগুলো চলতে পারে না। ফ্রি চিকিৎসা ঘোষণা দেওয়ার দিনই সরকারের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোর জন্য বরাদ্দ করে অর্থ পাঠানো জরুরি ছিল। অনেক রোগী ঢাকায় এসেও যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অনেক রোগী টাকার অভাবে ঢাকায় আসতে পারেননি। তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আহত ব্যক্তিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরা হয়। প্ল্যাটফর্মটির তথ্যমতে, মোট ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা তারা সরাসরি আহতদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। বাকি ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা দুটি শহরের টিমগুলোর খাবার, যাতায়াত, আহত মানুষদের ওষুধ কিনে দেওয়া, অ্যাম্বুলেন্স বিল দেওয়া এবং আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া-আসাসহ অন্যান্য খাতে খরচ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুর রহমান ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইদুল ফয়সাল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মতিউর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলামিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।