শুধু নম্বরপ্লেট ফি ২৫০০ টাকা

একই ধরনের নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে রিকশাপ্রতি ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৭৪ টাকা। এ হিসাবে দক্ষিণের চেয়ে ৩২ গুণ বেশি চাইছে উত্তর।

ফাইল ছবি

অযান্ত্রিক বাহনকে শৃঙ্খলায় আনতে রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পাঁচ বছরের এই লাইসেন্সের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে কিউআর কোড (কুইক রেসপন্স কোড) যুক্ত নম্বরপ্লেট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের (স্মার্ট কার্ড) জন্য দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা। তবে একই ধরনের নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে (ডিএসসিসি) রিকশাপ্রতি ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৭৪ টাকা। এ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি দক্ষিণের চেয়ে ৩২ গুণ বেশি চাচ্ছে।

এই টাকা রিকশামালিকদের কাছ থেকে আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে দক্ষিণ সিটি নিবন্ধনের জন্য রিকশামালিকদের কাছ থেকে যে ১ হাজার ১০০ টাকা নিয়েছিল, সেই টাকার মধ্যেই নম্বরপ্লেট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড সরবরাহ করেছিল।

গত জুলাইয়ে ডিএনসিসির বোর্ড সভায় লাইসেন্সের আবেদন, নিবন্ধন ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আবেদনের ফি ১০০ টাকা, নিবন্ধন ফি ১০০ টাকা ও অন্যান্য ফি ১ হাজার টাকা ধরা হয়। পাশাপাশি ৫ বছরের জন্য নিবন্ধন ফি ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য ফি ৫ হাজার টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে স্মার্ট কার্ড ও কিউআর কোডযুক্ত নম্বরপ্লেটের জন্য আলাদা ২ হাজার ৫০০ টাকা ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়।

টাকা যাবে ঠিকাদারের পকেটে

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই রিকশার লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেওয়া শুরু হবে। ডিএনসিসির চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে রিকশার লাইসেন্স বাবদ আয় ১৬২ কোটি এবং নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট কার্ডে ব্যয় ৪০ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট কার্ডের জন্য রিকশামালিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হবে ঠিকই; কিন্তু তার পুরোটাই চলে যাবে যে প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদার এগুলো সরবরাহ করবে, তাদের পকেটে। এতে করপোরেশনের কোনো আয় হবে না।

দক্ষিণ সিটিতে ব্যয়

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০২০ সালে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮টি রিকশার লাইসেন্স দেয়। তারা লাইসেন্সের জন্য রিকশাপ্রতি নিয়েছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে আবেদন ফি ১০০ টাকা। আর বার্ষিক নিবন্ধন ফি বাবদ নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। এর আওতায় সংস্থাটি রিকশার জন্য কিউআর কোডযুক্ত নম্বরপ্লেট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড সরবরাহ করে। তাতে ব্যয় করেছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিসাবে প্রতিটি রিকশার জন্য নম্বরপ্লেট বাবদ ব্যয় হয় মাত্র ৭৪ টাকা।

দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধন ফির টাকা দিয়েই নম্বরপ্লেট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে শুধু ১০০ টাকা

ঢাকা উত্তর সিটি রিকশার লাইসেন্সের ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ফির কথা উল্লেখ করেছে। তাদের বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রায় অনুরূপ হারে ফি আদায় করে রিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তবে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী রিকশার বার্ষিক ফি ১০০ টাকা করে আদায় করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না। রিকশার নম্বরপ্লেট উন্নত করা নিয়ে একটি প্রস্তাব রয়েছে, যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

খরচ কম মোটরসাইকেলেও

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেটে ব্যয় হয় ২ হাজার ২৬০ টাকা। প্রাইভেট কার, বাস ও ট্রাকের নম্বরপ্লেটে খরচ হয় ৪ হাজার ৬২৮ টাকা। এ ধরনের যানে দুটি নম্বরপ্লেট থাকে। সে হিসেবে মোটরসাইকেলের চেয়ে রিকশার নম্বরপ্লেটের জন্য ২৪০ টাকা বেশি নিতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি। এ নিয়ে ডিএনসিসির রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ নেই

ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত ৭ জুন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। তাতে শুধু অযান্ত্রিক যানবাহনের আবেদনপত্রের জন্য ১০০ টাকা এবং নিবন্ধন ফি বর্তমানে প্রচলিত ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা নির্ধারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তারা যে রিকশামালিকদের কাছ থেকে নম্বরপ্লেটের জন্য আলাদা টাকা নেবে, তা উল্লেখ করেনি। তা ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি আসার আগেই তারা বোর্ড সভায় নিবন্ধন ফি এক হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রিকশায় কিউআর কোডযুক্ত নম্বরপ্লেট লাগালে কেউ নকল করতে পারবে না। তবে নম্বরপ্লেটের ফি শুধু বোর্ড সভায় পাস করানো হয়েছে, চূড়ান্ত করা হয়নি। বিআরটিএর দেওয়া নম্বরপ্লেটের চেয়েও রিকশায় ভালো মানের নম্বরপ্লেট দেওয়া হবে।