নালার পাশে কারা ফেলে পালিয়ে গেল ৮৬ বছরের জোবেদাকে

বৃদ্ধা জোবেদা খাতুন এখন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
ছবি: প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার, মাঘের শীতের সন্ধ্যা। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ার একটি গলি। গলিটির নালার পাশে প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধা। গোঙাচ্ছিলেন। শরীর প্রায় নিস্তেজ। তাঁর গোঙানির শব্দ শুনতে পান পাশের বাসায় থাকা এক নারী।

এরপরের ঘটনা। মমতাময়ী ওই নারী বাসা থেকে নিচে নেমে এসে বৃদ্ধাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। বৃদ্ধার চোখে পানি ছিটান তিনি। তখন বৃদ্ধা ধীরে ধীরে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু বলতে পারছিলেন না।

ওই নারীর পর সেখানে আসেন স্থানীয় আরও কয়েকজন। খবর পেয়ে পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আজ শুক্রবার রাত নয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁর চেতনা ফেরেনি।

পুলিশ বলছে, জোবেদা খাতুন সম্ভবত পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। এ জন্য স্বজনেরা তাঁকে এভাবে রাস্তায় ফেলে যান। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে তিনি অচেতন হয়ে যেতে পারেন। তাঁর স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ বৃদ্ধার আঙুলের ছাপ জাতীয় তথ্য বাতায়নের সঙ্গে মিলিয়ে জানতে পারে বৃদ্ধার নাম জোবেদা খাতুন। জন্ম ১৯৩৭ সালের ২ জানুয়ারি। বর্তমান ঠিকানা রমনার উত্তর নয়াটোলা। স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুরজিতপুরে।

পুলিশ বলছে, তারা তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে বৃদ্ধার নাম–পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। জোবেদা খাতুন সম্ভবত পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। এ জন্য স্বজনেরা তাঁকে এভাবে রাস্তায় ফেলে যান। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে তিনি অচেতন হয়ে যেতে পারেন। তাঁর স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা–পুলিশ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুই ব্যক্তি বৃদ্ধা জোবেদা খাতুনকে মমতাজ বেকারি গলির নালার পাশে রেখে পালিয়ে যান। তাঁর গোঙানির শব্দে পাশের বাসার এক নারী এসে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু বৃদ্ধার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। চোখে পানি ছিটালে বৃদ্ধা বিড়বিড় করছিলেন। কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তাঁকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, বৃদ্ধাকে সেখানে আগেও পড়ে থাকতে দেখেছেন তাঁরা।

পুলিশ আঙুলের ছাপ ‘জাতীয় তথ্য বাতায়নের’ সঙ্গে মিলিয়ে জানতে পারে বৃদ্ধার নাম জোবেদা খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

পরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশের একটি দল রাত নয়টার দিকে গলির পাশে রাস্তায় পড়ে থাকা একজন বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন ৬৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর ইউনিটের ৫৯ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছেন। বৃদ্ধার ভর্তির ফাইলে ‘আননোন পয়জনিং’ উল্লেখ রয়েছে।

বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জোবেদা খাতুন হাসপাতালের বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। তাঁর শরীরে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

জোবেদা খাতুনের পাশের শয্যায় থাকা রোগীদের পরিচর্যা করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, ভর্তির পর থেকে বৃদ্ধার চেতনা নেই। চোখ মেলছেন না। তাঁকে হাসপাতালে আনার সময় সঙ্গে থাকা দুই নারী দুপুরের দিকে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁরাও কথা বলার চেষ্টা করেন।

জোবেদা খাতুনকে তত্ত্বাবধান করছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৩ নম্বর ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার বেনজীর আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর চেতনাবোধ (কনসাস লেভেল) কাজ করছে না। কাল শনিবার তাঁর সিটি স্ক্যান (মস্তিষ্কের পরীক্ষা) করা হবে। এরপর তাঁর সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। অনেক সময় ‘আননোন পয়জনিং’ রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকার পর তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে।

এদিকে জোবেদা খাতুনের স্বজনদের খোঁজে তৎপরতা চলছে বলে জানান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জোবেদার স্বজনদের খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।