আজ ও কাল ঢাকাসহ চার জেলায় কারফিউ শিথিল থাকবে ৯ ঘণ্টা

  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক।

  • পরে সংবাদ সম্মেলনে কারফিউ–সংক্রান্ত তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কারফিউ শিথিলের সময় শেষের দিকে। সড়কে অফিসফেরত মানুষের ভিড়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে।ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত (৯ ঘণ্টা) ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় কারফিউ শিথিল থাকবে।

গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁর ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে রাত সাড়ে ১০টা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার এসব এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল।

আমি তো কারফিউ উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলিনি। আমরা শিথিল করার কথা বলছি। উঠিয়ে দেওয়ার কথা এখনো আসেনি। যখন আসবে, তখন আপনারা জানতে পারবেন, নিজেরাই বুঝতে পারবেন, এখন কারফিউ উঠিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেহেতু কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি, সে জন্য ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হচ্ছে। অন্যান্য জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে কারফিউ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

রোববার কি কারফিউ উঠিয়ে নেওয়া হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো কারফিউ উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলিনি। আমরা শিথিল করার কথা বলছি। উঠিয়ে দেওয়ার কথা এখনো আসেনি। যখন আসবে, তখন আপনারা জানতে পারবেন, নিজেরাই বুঝতে পারবেন, এখন কারফিউ উঠিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।’

সারা দেশে অভিযানে এ পর্যন্ত কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো চলমান প্রক্রিয়া। যে অন্যায় করেছে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের এক মেয়রের পিএসকে একই কায়দায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এটা তো মানুষের কাজ নয়। তাদের খুঁজে বের করতেই চিরুনি অভিযান করছি। আমরা চাই যে মানুষ আসলেই দোষী, তাকে বের করার জন্য। যত দিন পর্যন্ত সবাইকে ধরতে না পারব, তত দিন এই অভিযান চলবে।’

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে একটি চেইনশপের ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান জানালেন যদিও বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ শুরু হয়, কিন্তু তাঁরা চারটায় লেনদেন বন্ধ করে দিচ্ছেন। এরপর হিসাবপত্র মিলিয়ে পাঁচটায় তালা বন্ধ করে বিদায়।

গতকাল বৃহস্পতিবারের রাজধানীতে সকালে তীব্র যানজট ছিল। তবে পরে যানজট কিছুটা কমে আসে। পরিস্থিতি।

গতকাল বিকেল সোয়া চারটার দিকে কথা হয় মতিঝিলের সরকারি একটি অফিসের কর্মকর্তা এখলাছ হোসেনের সঙ্গে। মহাখালী এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘মতিঝিল থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত আসতে যানজটে না পড়লেও মহাখালীর কাছাকাছি এসে বাস থেমে আছে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। সামনে-পেছনে ব্যাপক যানজট।’

এখলাছের মতো রাজধানীর অফিসফেরত অনেককেই বিকেলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরেকজন শহিদুল ইসলাম। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আসাদগেটের দিকে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুঠোফোনে শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত ঠিকমতো এলেও এরপর আর গাড়ি এগোচ্ছে না। এমন যানজট ছিল সকালেও। অফিসে আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চাকুরে নাগরিকদের।

তবে গতকাল দুপুরের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। যেহেতু বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ বলবৎ হচ্ছে, তাই বেলা তিনটায় অফিস শেষ করে দ্রুত ঘরে ফিরতে বিকেলে এবং সকালে অফিসমুখী মানুষের চাপে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অফিসার্স ক্লাবের সামনে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট শেখ ইমরান হোসাইন। বিকেলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আগের চেয়ে সড়কে চাপ কিছুটা বেড়েছে।

গতকাল কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেচাকেনা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও কম। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে একটি চেইনশপের ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান জানালেন যদিও বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ শুরু হয়, কিন্তু তাঁরা চারটায় লেনদেন বন্ধ করে দিচ্ছেন। এরপর হিসাবপত্র মিলিয়ে পাঁচটায় তালা বন্ধ করে বিদায়। সপ্তাহখানেক ঘরে থাকার পর বুধবার কারফিউ শিথিল করে দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে। সেদিন লোকসমাগম বেশি হয়েছিল। সে তুলনায় গতকাল স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫ ভাগ বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ২০৪ জন নিহত হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ–সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। এরপর ধাপে ধাপে কারফিউ শিথিল করছে সরকার।