আলম খানকে নিয়ে সৈয়দ আব্দুল হাদী: বৃক্ষের পরিচয় ফলে

স্মরণসভায় বক্তব্য দেন শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী
ছবি: প্রথম আলো

বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। যে ফল তিনি রেখে গেছেন, তা যুগ যুগ মানুষের মনে বেঁচে থাকবে—বন্ধুসম সুরকার আলম খানের সমৃদ্ধ সংগীতকর্মের প্রতি ইঙ্গিত করে শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী এভাবেই তাঁর আবেগ প্রকাশ করেন। এ সময় শেষ দেখা না হওয়ায় আক্ষেপও করেন তিনি।

আজ রোববার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল প্রয়াত সুরকার আলম খানের স্মরণসভা। সেখানে আলম খানকে নিয়ে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যে কজন সুরকার বাংলা গানে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন, আলম খান তাঁদের অন্যতম। এমন নিভৃতচারী, বিনয়ী, নিরহংকার, নির্লোভ মানুষ আমাদের শিল্পীসমাজে কম দেখা যায়। স্মরণসভায় প্রশংসা নয়, সত্যি বলতে হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল মানুষ। সরল সব সুর করে গেছেন তিনি।’

আক্ষেপ করে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে নিঃসঙ্গ জীবনের কথা বলতাম। তিনিও চলে গেলেন। এখন আমি কার সঙ্গে কথা বলব! শরীর খারাপ ছিল, তবু সম্পর্কের টানে তিনি আমার “জীবনের গান” বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেটিই ছিল তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। তাঁর মৃত্যুর খবরও পাই বিকেলের দিকে। তখন শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি।’

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে চিত্রশালা মিলনায়তনে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুরকার শেখ সাদি খান, কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন, খুরশীদ আলম, সংগীত পরিচালক রুমু খান, আরমান খান প্রমুখ।

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘আলম ভাইয়ের স্মরণসভায় আসতে হবে কোনো দিন ভাবিনি। তাঁর সঙ্গে সুখ–দুঃখের অনেক স্মৃতি। নতুন গান তোলার সময় তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হতো। তিনি অনেক ছোটবেলা থেকে আমাকে গান করিয়েছেন। তাঁর সুরে বহু গান করেছি। আলম ভাইয়ের বেশির ভাগ সুর শুনলে বোঝা যেত সেটা আলম খানের সুর। সিনেমায় গাওয়ারও বহু আগে “ও মাধবী গো থাকো মোর অন্তরে”–এর মতো গান করেছিলাম। “আমি রজনীগন্ধ্যা ফুলের মতো” গানটি এত জনপ্রিয় যে এখনকার অনেকে এটা গায়। তিনি তরুণ শিল্পীদের দিয়ে গান করাতেন। পরে তাঁদের অনেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুণের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এন্ড্রু কিশোর অন্যতম। তিনি যেখানেই থাকুন, যেন শান্তি পান।’

এ সময় আলম খানের স্ত্রী গুলবানুকেও স্মরণ করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী গুলবানুর সঙ্গেও আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি “তুমি তো এখন আমারি কথা ভাবছো” গানটি লিখেছিলেন। ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল গানটি। তিনি চলে যাওয়ার পর আলম ভাই বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন। আমরা নিজেদের অসুখ নিয়েও কথা বলতাম। কারণ, আমরা ছিলাম একই পথের পথিক।’

সুরকার আলম খানের স্মরণে শিল্পকলা একাডেমিতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

শেখ সাদি খান বলেন, ‘বন্ধু হিসেবে আমি তাকে নিয়ে গর্ব করি। সে খুব ভালো ব্যাঞ্জো বাজাত, মাউথ অর্গান বাজাত। কমলাপুরে থাকাকালে আমরা নিয়মিত আড্ডা দিতাম। আড্ডায় সব সময় গান নিয়েই কথা হতো। তাকে স্মরণ করলে সে দীর্ঘায়ু হবে। তাকে সব সময় স্মরণ করব ভালোবেসে তার গান গাইব।’

আলম খানের অসমাপ্ত কাজের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো যেন তাঁর পরিবার করতে পারে, সেই প্রত্যাশা করি।’ খুরশীদ আলম বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁর গান গাওয়ার সময় যেন তাঁর নামটা স্মরণ করেন।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক কাজী আফতাব উদ্দিন, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান। স্মরণ ও স্মৃতিচারণার পর আলম খানের সুরে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান তরুণ শিল্পীরা।