রঙের ছোঁয়ায় বিজয় রাঙাল তারা

বিজয় দিবস উপলক্ষে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছবি আঁকছে এক শিশু
ছবি: জাহিদুল করিম

ধূসর স্মৃতিসৌধ। পাশে সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের পতাকা। সাদা কাগজে আঁকা একটি ছবিতে এভাবেই রঙের ছোঁয়া দিচ্ছিল ১৭ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক কিশোর। এ কাজে তাকে সহায়তা করছিলেন একজন শিক্ষক। বিজয় দিবস উপলক্ষে ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় আঁকা এই ছবিটি দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে।

‘বিজয়ে আলোকিত শিশু’ শিরোনামে আজ বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাঠে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নেয় ‘আলোকিত শিশু’-এর ২৪ শিক্ষার্থী।

ফারাজ আইয়াজ হোসেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ফারাজ। বন্ধুদের বাঁচাতে আত্মত্যাগ করা ফারাজের নামটি উচ্চারিত হয় সাহসের প্রতীক হিসেবে। সাহসী এই তরুণের নামে ‘ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলেছে তাঁর পরিবার। ফাউন্ডেশনটি দেশজুড়ে দুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করার পাশাপাশি চিকিৎসা ক্যাম্প ও শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মতো বিভিন্ন আয়োজন করে।  

রঙের ছোঁয়ায় রূপ পাচ্ছে স্মৃতিসৌধ
ছবি: জাহিদুল করিম

প্রতিযোগিতায় ১৩ বছরের এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে নিয়ে এসেছিলেন তার মা। তিনি জানালেন, তাঁর মেয়ে ‘আলোকিত শিশু’ স্কুলের নার্সারিতে পড়ে। আজ প্রথম তিনি এ ধরনের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।

এই আয়োজনের প্রশংসা করে ওই নারী বলেন, এর মাধ্যমে তাঁর মেয়ের মতো বিশেষ শিশুরা বাইরে এসে সময় কাটাতে পারে। ছবি আঁকার মাধ্যমে আনন্দ করতে পারে। তাঁর মতে, বাইরে এসে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে বিশেষ শিশুদের কিছু ভীতি কাজ করে। তাই এভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হলে সেই ভীতি কাটবে।

এক মাকে দেখা গেল তাঁর সাড়ে ৬ বছরের ছেলেকে জাতীয় পতাকা আঁকতে সাহায্য করতে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিনিও এই প্রথম এ ধরনের আয়োজনে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে এই ছেলেটি ছোট।

‘আলোকিত শিশু’ স্কুলের প্রধান পরামর্শক মো. জহির উদ্দিন আকন্দ প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্কুলে সাধারণ ও ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুরা পড়ে। তিনি বলেন, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করলেও সমাজের অনেকের মন এখনো উদার নয়। দুই ধরনের শিশুদের একসঙ্গে কোনো কার্যক্রমে যুক্ত করতে অনেকে এখনো ততটা উৎসাহিত হন না। সমাজে এ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতেই আলোকিত শিশু ও ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পরে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।