আলী যাকের স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বই পাঠ প্রতিযোগিতা

বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী
ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের স্মরণে ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ’ চালু হয়েছে। আলী যাকের স্মরণে বিশেষ এই উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এর আওতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনটি বই পাঠ ও প্রতিক্রিয়া লেখার ওপর দেওয়া হবে পুরস্কার। এ উপলক্ষে দেশের ৫০টি বেসরকারি পাঠাগারকে তিনটি বইয়ের পাঁচটি করে সেট দেওয়া হয়।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে বই হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তিন ট্রাস্টি মফিদুল হক, সারওয়ার আলী ও আসাদুজ্জামান নূর। ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ’-এর সমন্বয়কারী মো. শাহনেওয়াজ ও আলী যাকের পরিবারের পক্ষে ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকেরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠাগারগুলোকে দেওয়া হয় মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, কলেজের জন্য আলী যাকেরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সেই অরুণোদয় থেকে’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হাসান আজিজুল হকের ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ বইগুলো। বই পড়ে সরবরাহকারী পাঠাগারে লিখিত প্রতিক্রিয়া জমা দিতে হবে। সেখানে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর মোট ১০ জন পাঠককে পুরস্কৃত করবে জাতীয় কমিটি। তবে সনদ দেওয়া হবে প্রতিক্রিয়া জানানো সব পাঠককে। বই বিতরণ অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন জাদুঘরের ট্রাস্টিরা।

এ সময় সারওয়ার আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠাকালীন আট ট্রাস্টির তিনজন প্রয়াত। তাঁদের স্মৃতি রক্ষায় আমরা নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আলী যাকের ছিলেন এমন একজন গুণী মানুষ, তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। এমন গুণী আমাদের মধ্যে কমই এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা করা। নতুন প্রজন্মের কাছে এর ইতিহাস তুলে দেওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বই। সে কারণে এই উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে।’

আলী যাকের স্মরণে মফিদুল হক বলেন, ‘তিনি আজীবন একাত্তরের চেতনা বহন করে গেছেন। তাঁর এই চেতনা নিয়ে আমরা জেগে উঠব। যাঁরা এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, অন্তরের তাগিদ থেকেই যুক্ত হয়েছেন। এই পাঠাগারগুলো যুক্ত না হলে আমরাও এই উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারতাম না। আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা এই উদ্যোগের একটি পরিণতি টানতে চাই। বই পড়ার পর পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে ও তাদের পুরস্কৃত করতে চাই।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বই পড়লে তরুণদের মস্তিষ্ক প্রসারিত হবে, তাঁরা মুক্তচিন্তা ধারণ করতে পারবে। আমরা এই পাঠ কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। জাদুঘর শুধু অতীতের সংগ্রহশালা হয়ে থাকবে না। বর্তমানকে ধারণ করে ভবিষ্যতে আমরা কোথায় যেতে পারি, সেই দিকনির্দেশনাও দিতে চায়। সেই যাত্রা শুরু হয়ে গেল।’
ঢাকা মহানগর ও কয়েকটি জেলার ৫০টি বেসরকারি পাঠাগারকে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত হবে বই পাঠের এই উদ্যোগ। বই গ্রহণ করা পাঠাগারগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের দক্ষিণ গহিকমা ঢালু-নান্নু পাঠাগার, গোপালগঞ্জের বর্ণ গ্রন্থাগার, নারায়ণগঞ্জের সুধীজন পাঠাগার ও সাভারের মুক্তি গণপাঠাগার।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূরের হাত থেকে বই গ্রহণ করছেন একটি পাঠাগারের প্রতিনিধি
ছবি: প্রথম আলো

বই পাঠে যুক্ত নরসিংদীর শহীদ বুদ্ধিজীবী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, ‘আমরা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে বই পৌঁছে দিই। গ্রামের নারীরা আমাদের কাছে ধর্মীয় বই চায়। আমি আমার লাইব্রেরিয়ানদের বলেছি, আধুনিক ধর্মচেতনার বই সংগ্রহ করে সরবরাহ করতে। যাতে তাঁরা চিন্তায় আধুনিক হতে পারেন।’
ইরেশ যাকের বলেন, ‘এখানে উপস্থিত সব পাঠাগার পরিচালকের একটা লড়াই আছে। আমাদের এই সামাজিক বাস্তবতায় যাঁরা এ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’

বই পাঠ উদ্যোগের সমন্বয়কারী মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকেরকে নতুন প্রজন্মের পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাবে।

প্রয়াত তিন ট্রাস্টির স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন স্মরণে স্মারক বক্তৃতা ও জিয়াউদ্দিন তারিক আলী স্মরণে চালু করা হয়েছে গণহত্যা অধ্যয়ন ফেলোশিপ।

আলী যাকেরের স্মৃতি ধরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে ঢাকা মহানগরের ১০টি বেসরকারি পাঠাগার। সহায়তা করছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন।