১২৫ কোটি টাকা খরচের পরও জলজট

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা। গতকাল বেলা দুইটায় রাজধানীর জুরাইনের আলমবাগ এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় সুত্রাংয়ের প্রভাবে শুরু হওয়া বৃষ্টি তীব্রতা কমে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে। অথচ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কিছু কিছু এলাকার সড়ক ছিল পানির নিচে। এতে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা ছিলেন অনেকটা ঘরবন্দী। দরকারে বাইরে বের হতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি অন্তত ১২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। চলতি অর্থবছরে একই কাজের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বছর বছর এত টাকা খরচ করার পরও জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নগরবাসী।

পুরান ঢাকার মাজেদ সরদার রোড এলাকায় বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এবারই যে তাঁদের এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়, সামান্য বৃষ্টি হলেও সড়ক ডুবে থাকে। এই ভোগান্তি থেকে তাঁরা মুক্তি চান। তিনি জানান, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় কোমরসমান পানি ছিল।

১২ ঘণ্টায়ও সরেনি পানি

মেয়রের দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে চলতি বছরের গত মে মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘গত বর্ষা মৌসুমে এক ঘণ্টার মধ্যে রাস্তা থেকে বৃষ্টি পানি নামিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন করেছেন। এবার আধা ঘণ্টায় সড়ক থেকে পানি সরাবেন।’

তবে পুরান ঢাকার মাজেদ সরদার রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, সিদ্দিক বাজার, হোসনী দালান, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল–সংলগ্ন পাম্পের গলি, জুলাইনের আলমবাগ, মেডিকেল রোড, গোপীবাগে মিতালী রোড, ঢাকা কলেজসংলগ্ন নায়েম ভবনের গলি থেকে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টায়ও পানি সরেনি।

কুসুমবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজল বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার রাতে তাঁদের বাসায় কোমরপানি ছিল। সকালে পানি সেচে কিছুটা কমিয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাজেদ সরদার রোডের আশপাশের এলাকাটি অনেক নিচু। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পাম্প ছিল ‘অচল’

২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে স্লুইসগেট ও পাম্পগুলো দায়িত্ব বুঝে নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, ওয়াসার কাছ থেকে তারা যে দুটি (ধোলাইখাল ও কমলাপুর) স্লুইসগেট পেয়েছেন—এগুলো শতভাগ কার্যকর ছিল না। সাময়িক সময়ের জন্য তা সচল করেছিলেন। স্লুইসগেটে থাকা পাম্পগুলোও অচল।

দায়িত্ব নেওয়ার ২২ মাস পরও কেন এসব সচল করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যে ৫১টি স্লুইসগেট দক্ষিণ সিটি বুঝে নিয়েছিল, এর একটিও শতভাগ সচল নয় বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।

দিন শেষে মানুষ ফলাফল চায়

জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সিটির আওতাধীন সড়কগুলোতে থাকা পাইপ ও নর্দমা থেকে বর্জ্য অপসারণ করতে গত অর্থবছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। আর ছয়টি খাল ও তিনটি বক্স কালভার্ট পরিষ্কার বাবদ খরচ করেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে দরকার পরিকল্পিত পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থা। কিন্তু এই ব্যবস্থা পুরোপুরি তৈরি করতে পারেনি দক্ষিণ সিট।

সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে তাঁদের আরও বড় পরিসরে কাজ করতে হবে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিন শেষে মানুষ ফলাফল চায়। ওয়াসার কাজ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনও যদি জলবদ্ধতার নিরসন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’