‘বস্তিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার লজ্জার: সাবের হোসেন

বক্তব্য দিচ্ছেন সাবের হোসেন চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

‘আমরা যখন বস্তিবাসী শব্দটি ব্যবহার করি, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ, আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। সেই দেশে বস্তিবাসী থাকবে, তাহলে এটা কী ধরনের উন্নয়ন?’

বর্জ্য নিয়ে বস্তিবাসীর ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি লক্ষ্য, একটি তারিখ নির্ধারণ করা উচিত, যে বস্তিমুক্ত একটি বাংলাদেশ হবে। এ দেশে কেউ বস্তিবাসী থাকবে না।’

টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট ক্লাবের এলডি হলে ‘টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অংশীজনের সম্পৃক্ততা, শিখন ও করণীয়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে জাতীয় সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) ‘ঢাকা কলিং প্রজেক্ট’।

ইউএসএআইডির অর্থায়নে, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় জাতীয় সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) ‘ঢাকা কলিং প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা বারসিক, কাপ ও ইনসাইটস।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্রধান দায়িত্ব জনস্বার্থ। আওয়ামী লীগের হলেও আমি অর্থমন্ত্রীকে ছাড়ি না। তাঁকে যা বলা দরকার, আমি বলি। আমার জন্য দল নয়, সংবিধানই বড়। দল ভুল করলে আমার দায়িত্ব দলকে বলা যে তোমরা ভুল করছ।’

জনস্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে সরকারের যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে। এটা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। কারণ, এটি সংবিধানেই বলে দেওয়া হয়েছে। বরং সেই দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী যতটুকু পালন করার কথা ছিল, সেটা হয়তো আমরা এত দিন করতে পারিনি।’

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বক্তব্য শুরুর প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবের হোসেন বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের বক্তব্য শুরু করি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে। শুধু মুখে স্মরণ করলে তো হবে না। তিনি কী চেয়েছিলেন, সেটা জানতে হবে। সংবিধান তৈরির সময় থেকে তিনি জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেছেন। অথচ তখন পরিবেশ, দূষণ, বায়ুর মান—এসব নিয়ে কেউ কথা বলত না। তিনি তাঁর দূরদর্শিতা থেকে এটা করেছিলেন। এ জন্যই তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আরও বলেন, বস্তিবাসীরা জানত না তাদের সমস্যাগুলো কোথায় গিয়ে, কী বলবে, কীভাবে বলবে? ঢাকা কলিং প্রকল্পের মাধ্যমে সবাইকে এক মঞ্চে আনা হয়েছে। আপনারা (বস্তিবাসীর) দেখিয়েছেন তৃণমূল থেকে নীতিনির্ধারণী জায়গায় কীভাবে ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে হয়? এরই ধারাবাহিকতায় ১৫টি সুপারিশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২১–এ উঠে এসেছে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের। তবে জরুরি কারণে উপস্থিত থাকতে না পারায় মন্ত্রীর পাঠানো একটি ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।

ভিডিও বার্তায় মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে শিল্পায়ন বাড়ছে, বাড়ছে বর্জ্যও। তাই বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে। শহরের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়েও এখন বর্জ্য বাড়ছে। তাই ইউনিয়ন পর্যায় থেকেই বর্জ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এজাজ হুসাইন বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ এ যুগান্তকারী বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের কর্মকৌশল বা কর্মপরিকল্পনা সুস্পষ্ট নয়।

সভায় অন্য আলোচকেরা বলেন, শহরের ৫০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে না। ফলে এসব বর্জ্য শহরে দূষণ ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় পড়ে থাকা বর্জ্যের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্বিষহ ভোগান্তির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের ল্যান্ডফিলগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ হয়। এটা কার্বন ডাই–অক্সাইডের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকর। এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

সভায় ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ইউএসএইডের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন বিভাগের পরিচালক ক্রিস্টিন ম্যাকক্রে, ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ফয়সাল জামিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।