র্যাব সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া: আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন র্যাব সংস্কারের বিষয়ে বলেছেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মধ্যে থাকে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী সংস্কার হয়ে থাকে। জঙ্গিবাদ ও সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের সদর দপ্তর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের সংস্কার চেয়েছিল—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব সংস্কার নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার আগে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা লাগবে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ নির্দেশনা মানছেন না। এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে সাংবাদিক বন্ধুদের বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।’
আরেক প্রশ্নে মাঠে কাজ করতে গেলে একেবারে টার্গেট করে সাংবাদিকদের ওপর মারধর করা হয়, এমন প্রশ্নের উত্তর আইজিপি বলেন, ‘এমন অবস্থায় আপনারা আমাদের বলবেন, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।’
আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রম হ্যান্ডেলিং করার জন্য পুলিশ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা ক্ষতিয়ে দেখব।’
পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘পুলিশ সব সময় পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে থাকে। নির্বাচন কমিশনার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে থাকি। নিরপেক্ষতার সঙ্গে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে, তবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গিদের ট্রেনিং প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ‘আমরা যখন যেখানে তথ্য পেয়েছি, প্রতিটি তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে না। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।’
৯৭ হাজার বিদেশি যাঁদের পাসপোর্ট নেই, তাঁরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছেন। তাঁরা জঙ্গিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছেন। তাঁরা দেশের জন্য হুমকি কি না, এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাঁদের ওপর তথ্য নেওয়া হয়। যে দেশের নাগরিক, সেই দেশ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। আর ক্রাইমের সঙ্গে যদি তাঁরা জড়িত থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উন্নত পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে ভূমিকা কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আপনারা লক্ষ করেছেন, ইতিমধ্যে কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিট পুলিশের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি থানায় জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য ওপেন হাউস কার্যক্রম চালু রয়েছে। মাঠপর্যায়ে সব সদস্যকে জবাবদিহির আওতায় আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় ঘাটতি আছে, সেগুলো ঠিক করা হবে।’
নিখোঁজদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ চলছে
সম্প্রতি নিখোঁজ ৫০ তরুণদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এটি নিয়ে কাজ চলমান। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ-র্যাব জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ চলছে।
পুলিশে নানা ধরনের আঞ্চলিক গ্রুপিং রয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘আমি পুলিশের গ্রুপিং সম্পর্কে জানি না। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে ক্ষতিয়ে দেখব।’ ডিএমপিতে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন একই কর্মকর্তা। তাঁরা ঢাকা শহর ছাড়ছেন না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বদলির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অনুসরণ করা হয়। শুধু পুলিশে নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একই লোক অনেক দিন ধরে কাজ করেন। কর্মকর্তার দক্ষতা দেখে যদি মনে করা হয়, তাঁকে রাখা দরকার, তাহলে রেখে দেওয়া হয়। আর যাঁকে রাখা দরকার নেই, তাঁকে বদলি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি-প্রশাসন) কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি-ক্রাইম অপারেশনস) আতিকুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।