‘আমার মানিক মইর‍্যা গেল, কেডায় আদর করব আমারে’

ছেলের শোকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাতে বসে আহাজারি করছিলেন সোলাইমানের মা সুখজান খাতুন (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)ছবি: প্রথম আলো

এক ছেলে, আরেক ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতি দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সেই খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন সত্তরোর্ধ্ব সুখজান খাতুন। আজ শুক্রবার সকালে জানতে পারেন, ছেলে সোলাইমান মোল্লা (৪৫) আর বেঁচে নেই। সন্তান হারানো এই মায়ের আহাজারি যেন থামছেই না।

গত বুধবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসের আগুনে ৩৬ জন দগ্ধ হন। তাঁদেরই একজন সোলাইমান। রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। সোলাইমানের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

ছেলের শোকে দুপুরে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাতে বসে আহাজারি করছিলেন সুখজান খাতুন। বলছিলেন, ‘কত কষ্ট কইর‌্যা বড় করলাম আমার মানিকরে। আমার মানিক মইর‌্যা গেল রে। এই দেশের (গাজীপুর) মানুষ আমার ব্যাটারে (ছেলে) রাইহ্যা (রেখে) দিল রে। কেডায় আদর করব আমারে, ওরে মানিকরে। কার কাছে আমারে থুইয়্যা গেলারে।’

প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান সুখজানের স্বামী হোসেন মোল্লা। ছয় শিশুসন্তানকে বড় করতে গিয়ে সুখজান কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন, কখনো মাটি কাটার কাজ করেছেন। আহাজারিতে বারবার তিনি এ কথাগুলোই বলছিলেন।

সুখজান খাতুনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাঁর আরেক ছেলে সুখ চান মোল্লা। তিনি গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কৃষিকাজ করেন। প্রথম আলোকে সুখ চান বলেন, তাঁর দুই ভাই উজ্জ্বল মোল্লা ও সোলাইমান মোল্লা পরিবার নিয়ে কালিয়াকৈরে থাকেন। বুধবার গ্যাসের সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন সোলাইমান মোল্লা। একই ঘটনায় তাঁর ভাই উজ্জ্বলের স্ত্রী শিল্পী আক্তারও দগ্ধ হন। উজ্জ্বল-শিল্পী দম্পতির দুই শিশুসন্তান সাত বছর বয়সী নীরব মোল্লা ও পাঁচ বছর বয়সী নুর নবীও দগ্ধ হয়েছে। শিল্পীর শরীরের ২৫ শতাংশ এবং নীরবের শরীরের ৩২ শতাংশ পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

ভাই–ভাজিতাসহ চার স্বজন দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে মা সুখজান খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল ঢাকায় আসেন সুখ চান মোল্লা। তিনি বলেন, প্রায় দেড় যুগ আগে তাঁর ভাই উজ্জ্বল মোল্লা জীবিকার তাগিদে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে আসেন। উজ্জ্বল গাড়িচালক। আর সোলাইমান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে আসেন পাঁচ বছর আগে। সোলাইমানের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় ভারী কাজ করতে পারতেন না। কখনো কখনো তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী শাপলা আক্তার পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

স্বজনেরা জানান, সোলাইমান পাঁচ সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে গ্রামে কৃষিকাজ করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে কালিয়াকৈরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। অন্য দুজন ছোট। একজনের বয়স সাত বছর এবং একজনের পাঁচ বছর।