ছয় রেস্তোরাঁকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা

অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় ভবনটির সামনে ব্যানার টাঙিয়ে দেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। বুধবার রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এলাকায় এ অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল অফিস কক্ষ করার কথা বলে। কিন্তু সেখানে রেস্তোরাঁ ভাড়া দিয়েছেন ভবনমালিক। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সেই ভবনে অভিযান চালিয়ে তিনটি রেস্তোরাঁকে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে।

গতকাল বুধবার খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিনটিসহ চারটি রেস্তোরাঁকে সাত লাখ টাকা জরিমানা করে রাজউক। এ ছাড়া গতকাল দুটি রেস্তোরাঁকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি একটি ভবনের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে রাস্তায় গ্যাস সিলিন্ডার রেখে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার ২০০ জনকে গতকাল ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাঁরা সবার জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান।

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে গত বৃহস্পতিবারের আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি বিভিন্ন সংস্থা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু করেছে। গতকাল চতুর্থ দিনের মতো অভিযান চালানো হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবারের অভিযানে সিলগালা করা হয় একটি ভবন (পাঁচটি রেস্তোরাঁ রয়েছে) ও সাতটি রেস্তোরাঁ। সেদিন রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি জরিমানা করে ১১টি রেস্তোরাঁ ও একটি ভবনকে। পুলিশ ৪৫৫টি রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করে ২৩৪টির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়। এর মধ্যে ৫টির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

রাজউকের অভিযান

খিলগাঁওয়ের ২৫/বি হোল্ডিংয়ের ১৪ তলা ভবনের নিচের চারটি তলা কয়েকটি রেস্তোরাঁকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই ভবনেই ডমিনোস পিৎজা, কেএফসি ও সিক্রেট রেসিপি, ক্রিমসন কাপ ও আল-কাদেরিয়া পার্টি সেন্টার। অভিযানের সময় ক্রিমসন কাপ ও আল-কাদেরিয়া পার্টি সেন্টার বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত ডমিনোস পিৎজাকে দুই লাখ টাকা, কেএফসিকে দুই লাখ, সিক্রেট রেসিপিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করতে এসব প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে তৈরি করা ভবনটিতে রেস্তোরাঁ চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস থেকে নেওয়া লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।

অভিযানের সময় ভবনমালিক কবির হোসেনকে ডেকে আনেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি ভবন নির্মাণকারী আবাসন প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপান। এই ভবনে অভিযান শেষে পাশের আরেকটি ভবনে চায়না ল্যান্ড রেস্টুরেন্টকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শেষে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভবন ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটানোর কারণে চারটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

উত্তর সিটির অভিযান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গতকাল গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর–সংলগ্ন ৪৫ নম্বর সড়কে অভিযান চালিয়ে দুটি রেস্তোরাঁ ও একটি ভবনের মালিককে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে কাচ্চি ভাইকে এক লাখ টাকা ও ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ভবনে চলাচলের সিঁড়ি ভেঙে দোকান বানানোয় একটি ভবনের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় দুটি ভবনে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

উত্তর সিটির অভিযানে ছিলেন সংস্থাটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকারনাইন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মতামতের ভিত্তিতে দুটি ভবনকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করেছে পুলিশ। অভিযানে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিয়মিত মামলা করা হয় ২০টি। এ ছাড়া ৮৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরকারের পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়েছিল। গতকাল রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অভিযান চালিয়েছে।

গ্রেপ্তার আরও ২০০

গ্যাস সিলিন্ডার রাস্তায় রেখে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ২০০ জনকে গতকার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। তাঁদের বেশির ভাগই রেস্তোরাঁ ও অস্থায়ী দোকানের কর্মচারী।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার পর তাঁরা সবাই ছাড়া পান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপি অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় নন এফআইআর প্রসিকিউশন করেছে (অধর্তব্য মামলা) পুলিশ।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জনসাধারণ ও যান চলাচলের জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার ও দোকানের সরঞ্জাম রাখাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।