গভীর রাতে পল্লবী থানায় ঢুকে পুলিশকে কিল-ঘুষির অভিযোগে মামলা, তরুণ গ্রেপ্তার

আবদুর রাজ্জাকছবি: পুলিশের কাছ থেকে সংগৃহীত

রাজধানীর পল্লবী থানায় ঢুকে হট্টগোল এবং পুলিশকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করার অভিযোগে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মামলা হয়েছে। আবদুর রাজ্জাক ওরফে ফাহিম (২০) নামের তরুণকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে ওই তরুণ থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা করেন। এতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চারজন আহত হন।

পুলিশের পল্লবী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদ হোসেন আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আবদুর রাজ্জাক পল্লবী থানায় ঢোকেন। এ সময় তিনি থানার ওসি নজরুল ইসলামের কক্ষে যান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং খুনের ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ কী করছে, তা জানতে চান তিনি। এ সময় ওসি তাঁকে বলেন, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তখন রাজ্জাক বলেন, ‘আপনারা কিছুই করছেন না; খুন হয়েছে জানেন না।’

এসি জাহিদের বর্ণনা অনুযায়ী, ওসি ওই তরুণকে তখন বলেন, ‘কোথায় খুন হয়েছে, আমি জানি না।’ তখন রাজ্জাক ‘আপনার ডিউটি অফিসার জানে, আর আপনি জানেন না’ বলে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।’ তখন ওসি রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে যান। ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও ওই ঘটনা জানেন না বলে জানান। এরপর ডিউটি অফিসারের কক্ষে সেবা নিতে আসা দুই ব্যক্তিকে দেখিয়ে তরুণ রাজ্জাক বলেন, তাঁরা খুনের কথা জানেন। ওই দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরাও বিষয়টি জানেন না বলেন।

এ সময় রাজ্জাক সেবা নিতে আসা দুই ব্যক্তিকে কিল–ঘুষি মারেন। সেখানে কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিন এগিয়ে গেলে তাঁকে কিল-ঘুষি মারেন। এতে নাসিরের একটি আঙুল ভেঙে যায়। ওসি পুলিশ কর্মকর্তা নাসিরকে রক্ষা করতে গেলে উত্তেজিত রাজ্জাক ওসিকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারেন। ওই পরিস্থিতিতে তরুণকে হাতকড়া পরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্জাক বলেছেন, তাঁরা কয়েকজন গাজীপুর থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে পল্লবী থানা এলাকায় ঘুরতে এসেছেন। মাইক্রোবাসসহ বাকি তিনজন থানার বাইরে কালশী এলাকায় আছেন। পরে পুলিশ থানার বাইরে গিয়ে মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে থানার নিয়ে আসে। তাঁরা রাজ্জাকের বন্ধু। মাইক্রোবাসে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লোগোসংবলিত স্টিকার লাগানো ছিল।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. মাকছুদের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাজ্জাক সুবিধা পেতে হয়তো মাইক্রোবাসে টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ দুপুরে পল্লবী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় রাজ্জাককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আর রাজ্জাকের তিন সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মাকছুদের রহমান আরও বলেন, রাজ্জাকের দাবি তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তবে তাঁকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। রাজ্জাক তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে কেন ঢাকায় এসেছেন এবং পল্লবী থানায় ঢুকে কেন হামলা চালিয়েছেন, সেই বিষয়ে রাজ্জাক ও তার সঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, পল্লবী এলাকায় গতকাল রাতে খুনের ঘটনা ঘটেনি। থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজনকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজ্জাকের হামলায় ওসি,এসআইসহ (উপপরিদর্শক) আহত চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

রাজ্জাকের বাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুরে। তার বাবা একটি বায়িং হাউসের কর্মকর্তা।