শিল্পকলায় বাংলাদেশ থিয়েটারের তিন যুগ পূর্তি উৎসব

বাংলাদেশ থিয়েটারের তিন যুগ পূর্তি উৎসবের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নাট্যজন ম হামিদ
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার আগে পুলিশকে নাটকের পাণ্ডুলিপি দেখাতে হতো। নাটকেও ছিল সেন্সর প্রথা। সেসব উপেক্ষা করে মঞ্চনাটককে এগিয়ে নিয়েছেন ঢাকার নাট্যকর্মীরা। নাটকে তুলে এনেছিলেন মানুষের বঞ্চনার কথা। বাংলাদেশ থিয়েটারের তিন যুগ পূর্তির আয়োজনে সেসব দিন স্মরণ করলেন নাট্যজন ম হামিদ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন যুগ পূর্তি উৎসবের আয়োজন করা হয়। জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন নাট্যজন ম হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আগেও নাটকের দর্শক কম ছিল, নাটকও কম হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বন্যায় ত্রাণ সংগ্রহের জন্য নাটকের টিকিট বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক অনুমতি দেয়নি। প্রশাসন যতভাবে পেরেছে আমাদের নাট্যচর্চা আটকে দিয়েছে।’

ম হামিদ আরও বলেন, ‘নাটক মঞ্চস্থ করার আগে সেন্সর করিয়ে নেওয়ার প্রচলন ছিল। কিন্তু আমরা সেন্সর উপেক্ষা করে নাটক মঞ্চস্থ করতে শুরু করি, যা এখনো করছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। আমরা মানুষের বঞ্চনা, শোষণ নাটকে তুলে এনেছি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হয়। বাংলাদেশ থিয়েটারের সভাপতি আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নাট্যজন কেরামত মওলা, নৃত্যগুরু আমানুল হক, নাট্যকার আবদুস সেলিম।

আবদুস সেলিম বলেন, সৃজনশীলতাকে পরিচর্যা করা নাট্যদলগুলোর দায়িত্ব। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে নান্দনিকতার চর্চা জারি রাখা গ্রুপ থিয়েটার চর্চারই অংশ। অথচ এত বছরের নাট্যচর্চার পরও মঞ্চনাটকে এখন দর্শক হয় না। এখনকার তরুণ–তরুণীদের আনন্দ বিশৃঙ্খল। তাঁরা নাটক দেখার বদলে বেইলি রোডে আড্ডা দেয়, সেলফি তোলে, ফেসবুকে ছবি দেয়। এসবের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বরং মঞ্চের সামনে বসে নাটক দেখলে তাদের উপকার হতো। সংস্কৃতিবান হয়ে, নন্দন চিন্তায় নিজেকে এগিয়ে নিতে পারত তারা।

কেরামত মাওলা বলেন, ‘নাটকের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ভবিষ্যতে লাভই হবে। আমরা একসঙ্গে যারা নাট্যচর্চা শুরু করেছি, তাঁরা প্রায় সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে যারা এই অঙ্গণে এসেছে, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারেনি। কারণ, তাঁরা শুধু এসেছে আর গেছে। চর্চা ছাড়া, নাট্যপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিনিময় ছাড়া নিজেকে গড়া যায় না।’

নৃত্যগুরু আমানুল হক বলেন, ‘নাটক সমাজ ও দেশের কথা বলে। নাটকের ভেতর যদি সমাজ ও দেশ নিয়ে কোনো বার্তা না থাকে, তাহলে সেটা সার্থক হয় না। এই সময়ে এসে নাটককে এগিয়ে নিতে হলে নাটকের ভালো পৃষ্ঠপোষক দরকার। এতগুলো বছর একটি নাটকের দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থিয়েটারকে অভিনন্দন জানাই।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসব আহ্বায়ক রফিকুল্লা। আলোচনা পর্ব শেষে ছিল শিশুদের দলীয় নৃত্য। পরিবেশন করে নাচের দল সুর ছন্দ ও নুপুরের ছন্দ। এরপর মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘আমি’। এতে একক অভিনয় করেন খন্দকার শাহ আলম। এর আগে জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল বাউল গান, লোকগান ও আবৃত্তি। শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। এ দিনেও থাকবে নানা আয়োজন।