বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরীতে যাবে ডকইয়ার্ড

ঢাকায় নৌযান নির্মাণ ও মেরামতের ডকইয়ার্ডগুলো বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী নদীতীরে স্থানান্তর করতে চায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় নৌযান নির্মাণ ও মেরামতের ডকইয়ার্ডগুলো বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী নদীতীরে স্থানান্তর করতে চায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শিগগিরই এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এতে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিআইডব্লিউটিএ আয়োজিত এক জাতীয় কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডকইয়ার্ড স্থানান্তরসংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)।

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদরঘাটের বিপরীত দিকে ডকইয়ার্ডগুলো গড়ে উঠেছে। সেখানে ৯৭টি ডকইয়ার্ড আছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব ডকইয়ার্ডের কারণে নৌ চলাচলে সমস্যা, অপরিকল্পিত নোঙর, নদী দখল, দূষণ ও দুর্ঘটনা ঘটে। ডকইয়ার্ডগুলো এখান থেকে সরিয়ে ধলেশ্বরী (কেরানীগঞ্জের আনন্দ বাজার ও জাজিরা এলাকা) নদীতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে ধলেশ্বরীর তীরে ১০‍৬টি ডকইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার বর্গকিলোমিটারের ৬টি, ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২০টি, ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৪০টি, ১ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২০টি ও ৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২০টি ডকইয়ার্ড থাকবে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী বলেন, বুড়িগঙ্গায় থাকা ডকইয়ার্ডগুলোর অবদান অসামান্য। এই ডকইয়ার্ডগুলো যখন গড়ে ওঠে (৭০ বছর আগে), তখন দেশে মানুষ ছিল ৫ কোটি, এখন হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নদীর ওপর চাপ বেড়েছে।

পরিকল্পিতভাবে ডকইয়ার্ড না গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডকইয়ার্ড ও সেখানে নির্মিত জাহাজে বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য শোধনাগার রাখতে হবে। ডকইয়ার্ডমালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকলে সে জায়গার প্রতি মায়া তৈরি হয়। দেশের স্বার্থে সেই মায়া ত্যাগ করে ডকইয়ার্ডগুলো আগের জায়গা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এতে সবার ভালো হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ডকইয়ার্ড সরানোসংক্রান্ত প্রকল্পের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্পে বলতে হবে, কবে থেকে ডকইয়ার্ড সরানোর কাজ শুরু হবে, কবে শেষ হবে।

বাংলাদেশ থেকে ইরান ১০০টি নৌযান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, এভাবে বিদেশ থেকে কেউ যখন নৌযান কিনতে আসবেন, তখন তিনি ডকইয়ার্ডের মানও দেখবেন। এ জন্য মানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ডকইয়ার্ড গড়ার প্রতি তিনি জোর দেন।

কর্মশালায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বুড়িগঙ্গা থেকে ডকইয়ার্ড সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মূলত দুটি কারণে। এক. ডকইয়ার্ডের কারণে নদী দূষণ হচ্ছে। দুই. ডকইয়ার্ডগুলো নদীর গতিপথ সংকুচিত করে ফেলেছে। ডকইয়ার্ডমালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলেন না।’ ডকইয়ার্ড থেকে জ্বালানি বর্জ্য নদীতে ফেলা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে ডকইয়ার্ডগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেটিও নদীর তীরে। নতুন জায়গায় ডকইয়ার্ডগুলো যেন পরিবেশবান্ধব হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার তীরে থাকা ডকইয়ার্ডগুলো সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পবিপ্লবে কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো উপযুক্ত জায়গায় সরিয়ে নিতে পারলে বুড়িগঙ্গার দূষণ কমার পাশাপাশি নৌযান চলাচলের সুযোগ বাড়বে।

কর্মশালায় সমীক্ষা প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরেন আইডব্লিউএম-এর কোস্ট, পোর্ট অ্যান্ড এসটুয়ারি বিভাগের জুনিয়র স্পেশালিস্ট তানিম সারোয়ার। কর্মশালার মুক্ত আলোচনায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অংশীজনেরা ডকইয়ার্ডগুলো সরানো নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।