জন্মদিনের সকালে আহমদ রফিকের হাতে নিজ রচনাবলি

আজ সোমবার ৯৪তম জন্মদিনের সকালে ইস্কাটনের বাসায় ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক
ছবি: দীপু মালাকার

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের হাতে তুলে দেওয়া হলো তাঁর রচনাবলির প্রথম খণ্ড। আজ সোমবার ৯৪তম জন্মদিনের সকালে ‘আহমদ রফিক রচনাবলি: প্রথম খণ্ড’ তাঁর হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় সেখান থেকে আহমদ রফিকের একটি কবিতা পড়ে শোনান তিনি।

জন্মদিন উপলক্ষে সকালে আহমদ রফিকের ইস্কাটনের বাসায় ফুল ও শুভেচ্ছা উপহার নিয়ে হাজির হন অনেকে। সেখানে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে একটি কেকও কাটা হয়।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মো. মোবারক হোসেন; সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক নূরুন্নাহার খানম, চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নান, আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদ হাশিম, ইশরাত রহমান নাদিয়া প্রমুখ।

নিজ রচনাবলি হাতে পেয়ে আহমদ রফিক বলেন, ‘মনটা ভরে গেল। বই বের হওয়া লেখকের জন্য খুব আনন্দের, খুব উপভোগের ব্যাপার। ১৯৫৮ সালে যখন আমার প্রথম বই বের হলো, কী ভালোটাই না লেগেছিল।’

রচনাবলির পাশাপাশি আত্মজীবনীমূলক আরও একটি বইয়ের খবরও জানালেন এই লেখক। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বেরিয়েছে আমার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসধর্মী বই “দুই মৃত্যুর মাঝখানে নান্দনিক একাকিত্বে”। আমার জীবনটা যে ট্রাজিক একাকিত্বের জীবন, সেটার কিছু আভাস-ইঙ্গিত সেখানে আছে।’

শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই

এদিকে আহমদ রফিকের জন্মদিন উপলক্ষে সকালে বাংলা একাডেমিতে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভায় ‘আহমদ রফিক: সমকালে ও উত্তরকালে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক খান মাহবুব।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা বলেন, ‘আহমদ রফিক মহান ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত রাজপথ থেকে সংগ্রাম করে চলেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য এবং একটি মানবিক পৃথিবীর জন্য তাঁর এই সংগ্রাম এখনো চলছে। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও তিনি তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমি জীবদ্দশায় তাঁর রচনাবলির প্রকাশ কার্যক্রম শুরু করতে পেরে ধন্য।’

প্রবন্ধে খান মাহবুব লিখেছেন, ‘আহমদ রফিক বাংলার এক বহুমাত্রিক মনীষা। ভাষা আন্দোলনের এই বীর যোদ্ধা একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য ইতিহাসকারও বটে। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে রবীন্দ্র-গবেষণার পথিকৃৎ। আহমদ রফিক বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি, পাশাপাশি তিনি এ দেশের কবিতার নিষ্ঠাবান সমালোচক ও গবেষকও বটে।’

আরও পড়ুন

আহমদ রফিকের কর্মসীমানা প্রসঙ্গে প্রবন্ধে বলা হয়, ‘আহমদ রফিকের আগ্রহের এলাকা বহুধা-বিস্তৃত। তিনি দেশভাগের ভিন্নতর ইতিহাস যেমন অনুসন্ধান করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন, তেমনি চে গুয়েভারা, বিদ্যাসাগর, নজরুল, জীবনানন্দসহ আমাদের তরুণতর লেখকদের রচনা নিয়েও সমানভাবে বিশ্লেষণধর্মী রচনা উপহার দিয়ে চলেছেন। শতবর্ষের সীমানায় দাঁড়িয়ে একজন আহমদ রফিক আমাদের বিস্ময়!’

সভায় কে এম খালিদ বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বাংলা একাডেমি আহমদ রফিকের জীবদ্দশায় তাঁর রচনাবলি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কারণ, আমাদের সমাজে মৃত্যুর পর মনীষীদের মূল্যায়নের রীতি প্রচলিত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আহমদ রফিকের মতো গুণী মানুষদের তাঁদের জীবদ্দশায় যথাযথ মূল্যায়নের চেষ্টা করলে নতুন প্রজন্ম তাঁদের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারবে। আশা করি, বাংলা একাডেমি শিগগিরই আহমদ রফিক রচনাবলির সব কটি খণ্ড প্রকাশ করতে সক্ষম হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আহমদ রফিক আমাদের চিন্তা ও মননকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম, সম্পাদনা এবং সাংগঠনিক তৎপরতা এ দেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আহমদ রফিকের ৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলা একাডেমি কর্তৃক তাঁর রচনাবলির প্রথম খণ্ড প্রকাশ আমাদের সবার জন্যই উদ্‌যাপনীয় বিষয়।’

সভার শুরুতে জাতীয় সংসদের সদ্য প্রয়াত উপনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এ সময় তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।