ঢাকায় প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’

রাজধানীর গুলশান-২ গোলচত্বরে বুধবার ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ ব্যবহার করে স্মার্ট পার্কিংয়ের উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং পার্কিং সুবিধায় পরিবর্তন আনতে রাজধানীতে প্রথমবারের মতো ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রাথমিক অবস্থায় গুলশানের আটটি সড়কের ২০২ জায়গায় এই সুবিধা পাওয়া যাবে।

ঢাকা উত্তর সিটি বলছে, রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং সুবিধা পেতে হলে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোর থেকে ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। পরে অ্যাপ থেকেই জায়গা পছন্দ করে সেখানে গাড়ি রাখা যাবে। এ ছাড়া রাস্তায় ‘অন স্ট্রিট পার্কিং’ লেখা সাইনবোর্ড দেখেও পার্কিংয়ের সুযোগ থাকবে।

গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য প্রথম ২ ঘণ্টা ৫০ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ৫০ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হবে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রথম ২ ঘণ্টা ১৫ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা করে দিতে হবে। অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে মুঠোফোনেই ফি পরিশোধ করা যাবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ের জায়গায় দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছেও ফি দেওয়া যাবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে গুলশানের ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ১০৩ নম্বর সড়ক, ডিআইটি সার্কুলার রোড এবং গুলশান-২ ইনার সার্কুলার রোডের ২০২ জায়গায় রাস্তার ওপর টাকার বিনিময়ে গাড়ি পার্কিং করা যাবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি। যেখানে-সেখানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ এবং নিরাপদ পার্কিং নিশ্চিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।  

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। আপনি ভোলার চরে যান, সেখানেও দেখবেন মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। ডাক্তারের সেবার জন্য ফোন করছেন। পৃথিবীর সব প্রান্তে মানুষ যোগাযোগ করছেন। বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও আজ মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায় আছেন ও বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। আজ ঢাকা উত্তর সিটিতে স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট সোসাইটি দরকার, স্মার্ট এডুকেশন দরকার, স্মার্ট গভর্ন্যান্স দরকার। সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হবে।’

এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালুর উদ্যোগ বাংলাদেশে এই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিএলডিপির (কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) আওতায় মায়ামি সিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি। সবার সহযোগিতায় এটি সফল হবে। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটির প্রতিটি এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ডিএনসিসির স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তারা নিজেরা নিজেদের অর্থায়ন ও উদ্যোগে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটির সঙ্গে আমরা আছি। দেখা যায় “নো পার্কিং” বললেও কোথায় পার্কিং করতে হবে, তা আমরা বলি না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কোথায় পার্কিং করা যাবে, সেটি বলার সুযোগ হবে।’  

বক্তৃতা শেষে অতিথিদের নিয়ে গুলশান-২ গোলচত্বরে ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ ব্যবহার করে স্মার্ট পার্কিংয়ের উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটির তথ্য কর্মকর্তা মো. পিয়াল হাছানের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক প্রমুখ।