সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: কত দিন পর ছেলে আমার ফোন দিছে

আহত কলেজশিক্ষার্থী জাহান সরদারের মা সেলিনা বেগম
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে একটি কল আসে। অপর পাশ থেকে ছেলে জাহান সরদার (২০) তাঁকে দেখা করতে বলছিলেন। ছেলে ফোন করেছে, বিষয়টি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না জাহাঙ্গীর আলম।

জাহান সরদার গত মঙ্গলবার রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আজ দুপুরে তাঁকে আইসিইউ থেকে পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। এই সেন্টার থেকেই জাহান সেখানে যাওয়ার জন্য বাবাকে ফোন করেন।

ছেলে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো মুঠোফোনে কথা বলায় আনন্দে কেঁদে ফেলেন মা সেলিনা বেগম। পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারের বাইরে অপেক্ষায় থাকা সেলিনা বলছিলেন, ‘ছেলে বাবার কাছে ফোন দিছে। কত দিন পর ছেলে আমার ফোন দিছে।’ এসব বলছিলেন আর কাঁদছিলেন তিনি। আর সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করছিলেন।

গত মঙ্গলবার দুর্ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যায় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন সেলিনা। ছয় দিন পরও একমুহূর্তের জন্য ছেলের কাছ থেকে সরেননি তিনি। আইসিইউর বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন, ছেলে সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসবে, সেই আশায়।

জাহান সরদার ঢাকার নবাবগঞ্জের সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে তিনি রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকতেন। সেলিনা বেগম-জাহাঙ্গীর আলম দম্পতির একমাত্র ছেলে জাহান। তাঁদের এক মেয়ে আছে। মেয়েটার ৯ বছরের ছোট জাহান।

মঙ্গলবার দুর্ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যায় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন সেলিনা। ছয় দিন পরও একমুহূর্তের জন্য ছেলের কাছ থেকে সরেননি তিনি। আইসিইউর বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন ছেলে সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসবে, সেই আশায়।

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন
প্রথম আলো ফাইল ছবি
‘আল্লাহ দ্রুতই রহমত করছে। হাত-পা নাড়াতে পারে। মাথা নিজেই সরাতে পারে। দোয়া কইরো, ছেলে যেন হাসপাতাল থেকে বের হতে পারে।
সেলিনা বেগম, কলেজছাত্র জাহান সরদারের মা

এই কয়দিন নাকের পানি, চোখের পানি একাকার করে রেখেছেন মা সেলিনা। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন ছেলের সুস্থতা চেয়ে। কখন চিকিৎসকেরা কোন জিনিস আনতে বলেন, সে জন্য ছিলেন সর্বদা সতর্ক। জাহানের বাবা জাহাঙ্গীর আলমও যেন ক্ষণিকের জন্য খ্যান্ত দেননি।

আরও পড়ুন

ছেলের কিছুটা সুস্থতায় আনন্দে আত্মহারা সেলিনা বেগম প্রথম আলোর এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আল্লাহ দ্রুতই রহমত করছে। হাত–পা নাড়াতে পারে। মাথা নিজেই সরাতে পারে। দোয়া কইরো, ছেলে যেন হাসপাতাল থেকে বের হতে পারে।’

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। খলিলুর রহমান (৩২) নামে একজন এখনো লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা) রয়েছেন। আর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় জাহানকে আইসিইউ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ওই ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও চারজন চিকিৎসাধীন আছেন।

আরও পড়ুন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও মো. রাজন (১৮) নামের একজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন। তিনি সিদ্দিকবাজারে একটি ইলেকট্রিকের দোকানে কাজ করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায়। থাকেন ঢাকার উত্তর মুগদায়।

রাজনের বাবা মো. জাফর আলী রাজধানীতে চলাচল করা ৮ নম্বর পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী। মা নাছিমা পোশাকশ্রমিক। জাফর আলী বলেন, ‘ছেলেটা এক মাস আগে বিয়ে করেছে। আর ছেলে এখন আইসিইউতে।’

এ ছাড়া সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় ঢামেক হাসপাতালে আরও ১৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।   

আরও পড়ুন