গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমাবেশ: শ্রমিক ছাঁটাই ও টার্গেটের চাপ বন্ধের দাবি

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতিছবি: বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সৌজন্যে

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের গ্রেড বৈষম্য, ছাঁটাই ও টার্গেটের চাপ বন্ধের দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। এর পাশাপাশি  শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং চার নিহত শ্রমিকের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিও করেছে সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার সকালে এসব দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। প্রেসক্লাবে সমাবেশ শেষে প্ল্যাকার্ডসহ একটি মিছিল পুরানা পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে মোড়ে গিয়ে এর আয়োজন শেষ করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, সরকারঘোষিত নতুন মজুরি পোশাকশ্রমিকেরা চলতি জানুয়ারি থেকে পেতে শুরু করেছেন। প্রাপ্তির শুরুতেই শ্রমিকেরা আরেক দফা সংকট ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ইতিমধ্যে নির্ধারিত মজুরিও বিভিন্ন কারখানায় কার্যকর হয়নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে যোগ হয়েছে, গ্রেডভেদে শ্রমিকদের ঠকানোর ব্যবস্থা। গ্রেড কমানোর কথা বলে মালিকেরা চতুর্থ গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়িয়েছেন, সেই সমান হারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে বৃদ্ধি না করে ইচ্ছেমতো মজুরি দিচ্ছেন। ফলে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ শ্রমিকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

তাসলিমা আখতার আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করার কারণে শ্রমিক গ্রেপ্তার, মামলা, নির্যাতনেই মালিকেরা থেমে থাকেননি। শুরু হয়েছে বিভিন্ন কারখানায় ছাঁটাই, টার্গেটের ভয়াবহ চাপ এবং বিনা ওভারটাইমে খাটানো বা ‘ফাউ’ খাটানো। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের চাপ বৃদ্ধিতে অমানবিক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিকেরা শারীরিকভাবেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন এবং অধিক পরিশ্রম এবং ক্লান্তিজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধি এবং মজুরিপ্রাপ্তি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আশুলিয়া, গাজীপুরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ইপিজেডে।

সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন সভায় বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করার কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় আমাকেসহ শতাধিক শ্রমিক এবং নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো দিন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।’

সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে মোট চারজন (আঞ্জুয়ারা, রাসেল, ইমরান, জামাল উদ্দীন) প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের বদলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক সংহতির সহ–সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর সাহা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, সহ–প্রচার সম্পাদক হযরত বিল্লাল শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা ও রানা প্লাজা শাখার নেতা রুপালি আক্তার, নারীবিষয়ক সম্পাদক শাহীদা আক্তার ও আঞ্চলিক নেতারা।