‘চাঁদা না পেয়ে’ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মারধর ছাত্রলীগের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার পর এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে তাঁদের মারধর করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ময়লা-আবর্জনা রাখার জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) আছে। এর দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে দৈনিক ১২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। চাঁদা না পেয়ে কর্মীদের মারধর করেন তাঁরা।  

এসটিএসের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন থেকে শহীদুল্লাহ হলের কিছু ছাত্র আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাঁরা আমাকে এ-ও বলেছিলেন, এখানে কাজ করলে টাকা দিতে হবে। গতকাল রাতে শহীদুল্লাহ হলের কিছু ছাত্র ফোন করে আধঘণ্টার মধ্যে দেখা করতে বলেন। তবে যাইনি। তাঁরা এসটিএসে কাজ করা আমার ভাতিজাকে মারধর করেছেন শুনে ঘটনাস্থলে যাই।’  

ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে তাঁকেও মারধর করা হয় জানিয়ে শাহ আলম বলেন, ‘আমাকে মারার সময় ছাত্ররা বলছিলেন, “প্রতিদিন আমাদের ১২ হাজার টাকা দিবি, নয়তো কাজকর্ম বন্ধ থাকবে।” এর একপর্যায়ে সেখানে সরদার (ওয়ার্ড পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রধান) এলে তাঁকেও মারধর করা হয়।’

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমানকে অবহিত করেছেন বলেও জানান শাহ আলম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম অথবা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

অভিযুক্ত ছাত্রদের সবাই শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী। তাঁদের মধ্যে আছেন হলের সহসভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে সোহেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম ওরফে নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুল আহমেদ ও জাহিদ আহমেদ ওরফে ম্যাক্স।  

জাহিদুল আলমের দাবি, এসটিএসের শাহ আলমকে মারধর করা হয়নি। তিনি কাকে টাকা দেন, এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আর জাহিদ আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অভিযুক্ত ছাত্রদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এত দিন এসটিএস থেকে টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে এসটিএসে যাই। শাহ আলমকে বলি, টাকা দিলে হলের নামে দিতে হবে, কোনো ব্যক্তিকে নয়। কথা বের করার জন্য তাঁর শার্টের কলার ধরা ও একটু জোরাজুরিও করা হয়।’

শাহ আলমের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাজহারুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নৈতিকতাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে কেউ সম্পৃক্ত থাকলে ছাত্রলীগ যথোপযুক্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।