ককটেল ফাটাতে দেখেনি কেউ, তবে মামলা দিয়েছে পুলিশ

বিএনপির দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেভাবে সাজানো বা ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়া হয়েছিল, তা আবার শুরু হয়েছে।

  • ঢাকায় ৯ মে থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মামলা।

  • আসামি আট শতাধিক বিরোধী নেতাকর্মী।

  • বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা।

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের কারওয়ান বাজার এলাকায় শতাধিক লোক মশাল ও বিস্ফোরকদ্রব্যসহ সমবেত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে ওই ব্যক্তিরা ককটেল ফাটিয়ে এবং একটি ভ্যানগাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়।

তেজগাঁও থানায় গত ১০ মে পুলিশের করা এক মামলায় এমন ঘটনার কথা বলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭৫ থেকে ৮০ জনসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহার অনুযায়ী ৯ মে (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৭টা ৫০ মিনিটে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল বলা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের ৯৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের টায়ার অ্যান্ড ব্যাটারি বাজারের দোকান থেকে সোনারগাঁও মোড় পর্যন্ত রাস্তার ওপর।

আরও পড়ুন

বর্ণিত ঘটনাস্থলের শুরুতে এবং শেষ প্রান্তে দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের কার্যালয়। একই সারিতে মাঝখানে রয়েছে আরও ১০টি গণমাধ্যমের কার্যালয়। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় সাধারণত কর্মদিবসে উল্লিখত এলাকায় গাড়ির জট লেগে থাকে। এমন একটি স্থানে এত মানুষের জমায়েত, নাশকতার চেষ্টা, ককটেলের বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পুলিশের মামলার আগে পর্যন্ত জানাজানি হয়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন, এমনকি মামলার সাক্ষীরাও সেদিন ককটেলের বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের এমন ঘটনা দেখেননি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক কালে রাজধানীতে এমন আরও পাঁচটি মামলার খবর পাওয়া গেছে। সেসব মামলায় বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। সব কটি মামলার বাদী পুলিশ। এজাহারের বর্ণনা বা অভিযোগ প্রায় একই রকমের।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সারা দেশে তাঁদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো বা ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছিল। এখন আরেকটা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবারও একই ধরনের মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন

তেজগাঁও থানার মামলা

কারওয়ান বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ওই মামলা করেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ তালিকায় ২০টি মশাল, বিস্ফোরিত ৩টি হাতবোমার অংশবিশেষ এবং একটি পুড়ে যাওয়া ভ্যানের অংশবিশেষ দেখানো হয়েছে। জব্দ তালিকায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে টায়ার অ্যান্ড ব্যাটারি বাজার দোকানের মালিক মো. মনির হোসেনকে। দোকানটি এটিএন নিউজ কার্যালয়ের পেছনে প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত। এর মালিক মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী সেদিন (৯ মে) মশাল নিয়ে আমার দোকান থেকে কিছুটা দূরে (দক্ষিণ দিকে) দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিন–চার মিনিট পর তাঁরা আবার সরে যান। তবে আমি সড়কের কোথাও ককটেল বিস্ফোরিত হতে কিংবা আগুন দিতে দেখিনি।’ মামলার জব্দ তালিকার এই সাক্ষী বলেন, তাঁর সামনে থেকে কোনো মশাল বা বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, কিছুই জব্দ করা হয়নি। তবে পুলিশ তাঁর নাম–ঠিকানা নিয়েছিল।

এই মামলার জব্দ তালিকার আরেকজন সাক্ষী আলামিনের (৩০) বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে কারওয়ান বাজারের ‘ওয়াসা গলি’। তাঁর যে মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি বন্ধ রয়েছে। ওয়াসা গলিতে গিয়ে তাঁর খোঁজ জানতে চাইলে সেখানকার দোকানিরা কেউ কিছু বলতে পারেননি। সেখানকার ঢাকা ট্রেড সেন্টার ভবনের নিরাপত্তারক্ষী লাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসা গলিতে আলামিন নামের কাউকে তিনি চেনেন না।

টায়ার অ্যান্ড ব্যাটারি বাজার দোকান থেকে সোনারগাঁও মোড়ের দিকে কিছুটা এগোলেই ইত্তেফাক ভবনের গলি। ওই গলির মুখে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে চায়ের দোকান রয়েছে মো. সোহাগের। ৯ মে সন্ধ্যায় ওই এলাকায় ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, আমি এ রকম কিছু দেখি নাই।’

ইত্তেফাক ভবনের গলির মুখ থেকে আরও আরেকটু এগোলে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের ভবন। সেখানে পাঁচটি গণমাধ্যমের কার্যালয়। এই ভবনের কোনায় প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাতে কবির হোসেনের চায়ের দোকান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে ককটেল ফুটলে অবশ্যই আমরা জানতে পারতাম।’

আলামত হিসাবে ২০টি মশাল, ৩টি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ বিশেষ ও একটি পুড়ে যাওয়া ভ্যান সোনারগাঁও মোড়ের জাহাঙ্গীর টাওয়ারের সামনে থেকে জব্দ করা হয় বলে মামলায় বলা হয়। ওই ভবনে একুশে টেলিভিশনের কার্যালয়। ভবনের সামনের ফুটপাতে দীর্ঘদিন মুঠোফোনের সিমকার্ড বিক্রি করেন মোহাম্মদ রোকন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল থেকে কমপক্ষে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে থাকেন। চলতি বছর এখানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে এমন কিছু তিনি দেখেননি, কারও কাছে শোনেননি।

মামলাটির তদন্ত তদারক করছেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর। প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ককটেল বিস্ফোরণের কথা বলছেন না, সেখানে মামলায় এই অভিযোগ কেন আনা হয়েছে, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন বিএনপির নেতা–কর্মীরা মশালমিছিল করেছিলেন, সেটির ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। তবে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে মামলার বাদী ভালো বলতে পারবেন।’

বিষয়টি নিয়ে বাদী ও জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা–কর্মীরা আগুন ধরাইয়া সোনারগাঁও মোড়ের দিকে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে যেসব আলামত জব্দ করেছি, তা ককটেল নয়; বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ।’

এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস কারাভোগের পর সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন বিএনপির ১০ নেতা–কর্মী। মামলার ১ নম্বর আসামি হলেন তেজগাঁও থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি রায়হান জমাদ্দার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে মিছিল হয়েছিল। তবে কোনো ককটেলের বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিসংযোগ অথবা কোনো ধরনের নাশকতা হয়নি। পুলিশ বিস্ফোরণের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলেই বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে।

চলতি বছরের মে মাস থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ককটেলের বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলার অভিযাগে রাজধানীতে ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ১৫০ নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আসামি করা হয় সাত শর বেশি ব্যক্তিকে। সবার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪৫ জনকে। এসব মামলায় আসামি হিসাবে ৪ হাজার ৪১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরও ১০ হাজার ৬৬৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মহাখালীতেও ককটেল ফোটেনি

তেজগাঁও থানার ওই মামলার পর জুনে প্রায় একই রকম অভিযোগে আরেকটি মামলা হয় বনানী থানায়। তাতে বলা হয়, ৮ জুন সকাল সোয়া আটটায় মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনের সড়কে বিএনপি ও জামায়াতের ১০০ থেকে ১৫০ নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা হাতে মহড়া দেয়। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ, যানবাহন ভাঙচুর ও ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ঘটনাস্থল থেকে দুটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, চারটি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়।

ঘটনাস্থল ওই কোভিড হাসপাতালের কাছাকাছি অবস্থিত বগুড়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। যা দিন–রাত খোলা থাকে। এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, গত ৮ জুন সকাল আটটার দিকে এই এলাকায় কোনো ককটেল বিস্ফোরন ও যানবাহন ভাঙচুরের কোনো ঘটনার কথা তাঁরা জানেন না।

তবে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম মিয়ার দাবি, ‘বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সেদিন ককেটল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছিল বলেই পুলিশ মামলা করেছে।’

এই মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী স্থানীয় সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা আমার চোখে পড়েনি। আমার সামনে থেকেও কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়নি। তবে কাগজে পুলিশ আমার স্বাক্ষর নিয়েছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজীব তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ককটেল বিস্ফোরণের সংবাদ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু আলামত পেয়ে তা জব্দ করি। পরে অজ্ঞাত নেতা–কর্মীদের নামে মামলা করেছি।’

বিস্ফোরণের আরও চার মামলা

গত জুলাইয়ে রাজধানীর ওয়ারীতে এবং অক্টোবরে শাহজাহানপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীর সড়কে ককটেলের ফাটিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলায় আটটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, বাঁশের লাঠি, রড, ব্যানার ও ফেস্টুন জব্দ দেখানো হয়। এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শতাধিক নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা প্রায় সাড়ে পাঁচ শ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ জুলাই সকাল ৯টায় পুরান ঢাকার ওয়ারি থানার রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে গোয়ালঘাট মোড়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৪০ থেকে ১৫০ জন নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, দা-লাঠিসোঁটা, বাঁশ ইটপাটকেল নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ২৯ জুলাই দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় বিএনপি ও জামায়াতের ১৪০ থেকে ১৫০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

মামলার আলামত হিসেবে গোয়ালঘাটের হিমেল হোটেলের সামনের সড়ক থেকে পাঁচটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, তিনটি কাঠের লাঠি জব্দ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জব্দ তালিকার সাক্ষী চা দোকানি মো. নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ককটেল বিস্ফোরিত হতে দেখিনি। তবে পুলিশ আমার সাক্ষ্য নিয়েছিল।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী ওয়ারী থানার এসআই উজ্জল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন রায়সাহেব বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’

এরপর গত ৩ অক্টোবর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পকেট গেটের সামনের সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনা হয় বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। তবে সেখানকার কনফেকশনারি দোকানের মালিক রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেখিনি। তবে জামায়াতের নেতা–কর্মীরা মিছিল করেছিলেন। পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শিকদার মহিতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের বাঁচাতে অনেক কথাই বলতে পারেন। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল বলেই আমরা মামলা দিয়েছি।’

পুলিশের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ, ১১ অক্টোবর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে উত্তরার বিএনএস টাওয়ারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই মামলায় জব্দ তালিকার সাক্ষী মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, মিছিল হয়েছিল বলে শুনেছেন। তবে কোনো ককটেল বিস্ফোরিত হতে দেখেননি বা বিস্ফোরণের শব্দও শোনেননি।

জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা করেছে। তাই মামলা দেওয়া হয়েছে। আর আসামিপক্ষ সব সময় মিথ্যা কথা বলে।’

সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটায় শাহজাহানপুর থানার কমলাপুরের বিশ্বাস টাওয়ারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

পুলিশের দায়ের করা এ মামলাগুলোতে আসামিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় করা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই ঢাকা মহানগরে ককটেলের বিস্ফোরণ ও নাশকতার অভিযোগে বিরোধী নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৭৮টি মামলা হয়েছিল। প্রায় সবগুলো মামলায় একই ধরণের অভিযোগ আনা হয়।

বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার বিষয়ে খোঁজ রাখেন দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করেছিল সরকার। আবারও নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার ককটেল বিস্ফোরণের মতো অস্তিত্ববিহীন ঘটনা দেখিয়ে মামলা দিচ্ছে।