ছাত্রলীগের ২ মামলায় ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

ছাত্র অধিকার পরিষদের ডাকা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির পর করা পৃথক দুটি মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

১১ অক্টোবর ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতা–কর্মীর জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন খান প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম আদালতে বলেন, গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের কয়েকজন অসুস্থ। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হলে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে শাহবাগ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতা-কর্মীকে আদালতে হাজির করা হয়।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাঁদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে মেডিকেল থেকে পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দুটি করেছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শনিবার সকালে ছাত্র অধিকার পরিষদের আটক নেতা-কর্মীদের আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানার পুলিশ।

আরও পড়ুন

শাহবাগ থানার একজন উপপরিদর্শক আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় দুটি পৃথক মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৪ ও ১৫ (৭ অক্টোবর)।
আসামিদের মধ্যে একজনকে ‘পলাতক’ দেখানো হয়েছে, বাকি ২৪ জনকে আজ সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুটি মামলার আসামি একই।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও সাড়া দেননি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে শাহবাগ থানার আওতাধীন এলাকায় হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের সামনে একজনের মাথায় আঘাত করে জখমের ঘটনায় একজন মামলা করেছেন। অন্যজন মামলা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তাঁকে ঘুষি দিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলার অভিযোগে।

এদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আজ গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হকের নেতৃত্বে পল্টন থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত অভিমুখে একটি মিছিল হয়েছে।

আদালতের সামনে পৌঁছানোর পর গণ অধিকারের নেতা নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নেতা–কর্মীদের মুক্তি দেওয়া না হলে তাঁরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী।