মশা মারা পরে, ছবি তোলা আগে

মশকনিধন কর্মীরা কাজ শুরু করেন দেরিতে। পুরো সময় কাজও করেন না। তদারকি নামেমাত্র।

প্রথম আলোর প্রতিবেদককে দেখার পর কাজ শুরু করেন মশককর্মীরা আর ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সুপারভাইজার। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ওসমানী উদ্যানে
ছবি: প্রথম আলো

মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে সকালের পালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করার কথা সাতজন কর্মীর। ঠিকমতো কর্মীরা কাজ করছেন কি না, সেটি তদারকির দায়িত্বে থাকেন আরও একজন (সুপারভাইজার)। তাঁদের কাজের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা। তবে গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধনে নিয়োজিত কর্মীরা কাজ শুরুই করেন বেলা ১১টা থেকে আর শেষ করেন দুপুর সাড়ে ১২টায়।

তবে কাগজে-কলমে কাজ শুরুর সময় দেখানো হয় সকাল নয়টায়। মশকনিধনের কর্মীরা ওয়ার্ডের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (একেক দিন একেক জায়গা) জড়ো হয়ে ছবি তুলে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা মাঠে সক্রিয় আছেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। গতকাল বেলা ১১টায় দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ওসমানী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, সুপারভাইজারসহ ছয়জন হাঁটাহাটি করছেন।

তাঁদের মধ্যে কেবল তিনজনের কাঁধে স্প্রে মেশিন (মশার লার্ভা নষ্ট করার যন্ত্র) রয়েছে। এর মধ্যে একটি স্প্রে মেশিন আবার নষ্ট। আরেকজনের হাতে থাকা পলিথিন ব্যাগে ব্লিচিং পাউডার। অন্য এক সদস্য বাকিদের সঙ্গ দিচ্ছেন। আর সুপারভাইজার সফিউল আলম কর্মীদের ছবি তোলার কাছে ব্যস্ত।

এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মশকনিধনের কাজে তৎপর হয়ে পড়েন কর্মীরা। মনোযোগ বাড়িয়ে যেখানে–সেখানে স্প্রে (তরল ওষুধ ছিটানো) করতে থাকেন। সাতজন কর্মীর বাকি দুজন কোথায় তা জানতে চাইলে সুপারভাইজার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলতে কর্মীদের ইশারা দেন। এর কিছুক্ষণ পর দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে তাঁরা ওসমানী উদ্যানের উত্তর দিকের একটি ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান।

মশকনিধন কর্মীদের খুঁজে বের করতে গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে করে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলি ও রাস্তা ঘুরতে থাকেন এই প্রতিবেদক। কোথাও তাঁদের দেখা না পেয়ে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে তিনি যোগাযোগ করেন। পরে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুপারভাইজারের ফোন নম্বর দেওয়া হয় এই প্রতিবেদককে। এরপর তাঁকে ফোন করলে তিনি বলেন, তাঁরা নগর ভবনে আছেন। ওসমানী উদ্যানে যাবেন ওষুধ ছিটাতে। এরপর সেখানে গিয়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায়।

মশা মারার ক্ষেত্রে কর্মীদের গাফিলতির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, সব ওয়ার্ডের পরিস্থিতি এক রকম নয়। তাঁরা মশকনিধন কর্মীদের কাজ আরও ভালোভাবে তদারক করবেন। হয়তো মাঠে কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়টা একটু এদিক–ওদিক হতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির হিসাব শাখা সূত্র বলছে, মশার ওষুধ কেনা বাবদ গত অর্থবছরে (২০২১-২২ সাল) প্রায় ২২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও (২০২২-২৩) প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, ৭৫টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ৯৭৫ জন মশকনিধন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের তদারকির দায়িত্বে আছেন ৭৫ জন সুপারভাইজার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত উড়ন্ত মশা মারতে (ফগিং) কর্মীদের কাজ করার কথা। এই কাজ করবেন প্রতিটি ওয়ার্ডে ছয় কর্মী।

তবে গতকাল বিকেল ৪টায় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেইলি রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ ছিটাতে এসেছেন মাত্র দুজন কর্মী। বাকিরা কোথায় জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, অন্য জায়গায় কাজে আছেন। তবে ওই দুজনের একজন স্বীকার করেন, তাঁরা কাজে এসেছেন বিকেল চারটায়।

মশকনিধন কর্মীদের গত কয়েক দিনে এলাকায় দেখেছেন কি না, তা জানতে চাইলে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির পাশে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী নূরে আলম বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমি কাউকে দেখি নাই। তারা কাজে ফাঁকি দেয়।’