ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁরা বিক্ষোভ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিচারের আশ্বাস পেয়ে এদিনের মতো কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি ও শাহবাগ এলাকায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। হামলায় দুই নেতাই গুরুতর আহত হয়েছেন। মেঘমল্লারের বাঁ চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। আর মাঈনের কপালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হয়েছে। একই সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের আরও দুই নেতাকেও মারধর করেছেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।
আহত মেঘমল্লার বসু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর রাজধানীর একটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে গেছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএসসি থেকেই আমাকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের (সৈকত) অনুসারীরা অনুসরণ করছিলেন। শাহবাগ মোড়ে তাঁরা আমার ও আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা শুভ্রর ওপর হামলা করেন। হামলায় আমি বাঁ চোখ ও মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছি।’
আর মাঈন আহমেদ বলেন, দুপুরে ডাস ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে রিকশায় উঠে কিছু দূর এগোতেই ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেন। হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসানের কয়েকজন অনুসারীকে তিনি চিনতে পেরেছেন।
মেঘমল্লার ও মাঈন ছাড়াও এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য শাহরিয়ার শিহাব এবং ঢাকা মহানগর শাখার সহসাধারণ সম্পাদক তাজওয়ার শুভ্রকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের দুজনকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুভ্র শাহবাগে মেঘমল্লারের সঙ্গে ছিলেন। আর শাহরিয়ারকে পলাশী এলাকায় মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপর এভাবে হামলা কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তবে তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করলে তারা মনে করছে যে এটি আমরা করছি। বিষয়টি এমন নয়। ছাত্র ইউনিয়ন দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা না চাইলে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার শক্তি-সামর্থ্য আমাদের থাকবে না।’
ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের এই হামলার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশকারা রয়েছে অভিযোগ করে সন্ধ্যায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীরা। সেখানে ‘বাহ্ ভিসি চমৎকার, ছাত্রলীগের পাহারাদার’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানে ঘণ্টাখানেক স্লোগান ও বক্তব্য চলার পর বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল সাড়ে সাতটার দিকে কার্যালয়ের ভেতরে যান। উপাচার্য একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা প্রক্টর মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তখনো বাইরে সমাবেশ চলছিল।
আধা ঘণ্টা আলোচনার পর প্রতিনিধিদল বেরিয়ে আসে। তাদের পক্ষ থেকে ছাত্র কাউন্সিলের নেতা ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ছাত্রনেতাদের ওপর হামলার দ্রুত বিচার চেয়েছি। প্রক্টর আমাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।’ এই হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার শাহবাগে একটি সংহতি সমাবেশ হবে। সেখান থেকেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হবে।
ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে এই উত্তেজনার শুরু সম্প্রতি রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতি রাখা নিয়ে। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের উদ্বোধন সামনে রেখে গত মাসের শেষ দিকে ওই কাঠামোটি রাখা হয়। এতে রাজু ভাস্কর্য আড়ালে চলে যাওয়ায় ছাত্রলীগের প্রতি সেটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায় ছাত্র ইউনিয়ন। তবে তাতে কাজ হয়নি।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল হয়। মিছিল শেষে সমাবেশ করতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এলে বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের কয়েকজন রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের স্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ভাঙচুর করেন। ওই ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাম সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করেন। হামলায় ৮ থেকে ১০ জন নেতা–কর্মী আহত হন।
এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টিএসসিতে বিক্ষোভ করেন। পরে রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দেয় ছাত্রলীগ। ভাস্কর্যের কাঠামোতে ‘ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ লেখা ব্যানারও সাঁটিয়ে দেয় তারা। এ অবস্থার মধ্যে আজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।