আটক লতিফ সিদ্দিকী, শিক্ষক হাফিজুরসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ আটক ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হতে যাচ্ছে। আটকের ১১ ঘণ্টা পর পুলিশ প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিআরইউতে একটি গোলটেবিল আলোচনা চলাকালে একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তাঁদের ওপর চড়াও হন। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাঁরা এই ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
রাত ১১টার দিকে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইমলাম প্রথম আলোকে বলেন, আটক ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁরা সবাই এখন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে আছেন।
আর রাত সাড়ে ১১টার পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তাঁরা সবাই এখন নগরীর মিন্টো রোডে ডিবি হেফাজতে আছেন।
রাত ১২টার পর যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে মামলা লেখার কাজ চলছে। সেখান থেকে তা থানায় এসে পৌঁছানোর পর মামলা করা হবে।
সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি অনুষ্ঠানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টায় আলোচনা সভাটি শুরু হয়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’
শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৫ জনকে তুলে দেন।
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ ভ্যানে নিয়ে যান।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল আমিন রাসেল নামের একজন বলেন, ‘আমরা জুলাই যোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।’